ভারত বাংলাদেশ যৌথবাহিনী গঠন সম্পর্কে কী জান?

অথবা, ভারত বাংলাদেশ যৌথবাহিনী গঠন সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা ছিল প্রত্যক্ষ, গভীর এবং ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায়ে যৌথবাহিনী পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করলে পাকিস্তানি বাহিনী পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে এবং মাত্র ১৩ দিনের আক্রমণে পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। যৌথবাহিনী গঠন ছিল স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্যায়। নিচে ভারত বাংলাদেশের যৌথবাহিনী গঠন সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো :
যৌথবাহিনী গঠন : বাংলাদেশ ও ভারতীয় যৌথবাহিনী একসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের লড়াই শুরু করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে ভারত সার্বিক সহায়তা প্রদান করলেও ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। ২১ নভেম্বর ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী কমাণ্ড গঠিত হয়েছিল। ৪ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ ভারত যৌথবাহিনী একসাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। মাত্র ১৮ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের পাক বিমানবাহিনী প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হামলায়। যৌথবাহিনী বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানের মূল ঘাঁটিকে পাশ কাটিয়ে দেশের ভিতর ঢুকে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও যৌথবাহিনীর আক্রমণে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। মিত্রবাহিনী বিভিন্ন সড়ক পথে অপ্রতিহত গতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যায়। ভারত ৬ ডিসেম্বর স্বীকৃতি দিলে একের পর এক রণাঙ্গনে পরাজিত হতে থাকে পাকবাহিনী, বাংলাদেশের বিজয় হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যাপার মাত্র। ৭ ডিসেম্বর যশোর ও সিলেট শত্রুমুক্ত হয়। অবশেষে নিশ্চিত পরাজয় জেনে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার সৈন্যসহ পাকবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের
কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি যৌথবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যৌথবাহিনী গঠন ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। যৌথবাহিনী গঠনের ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ত্বরান্বিত হয়। যৌথবাহিনীর আক্রমণে পাকবাহিনী স্থল, নৌ ও বিমান পথের যুদ্ধে সর্বক্ষেত্রে পরাজিত হয়। কাজেই বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে যৌথবাহিনী গঠন এবং সরাসরি যৌথবাহিনী
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে।