স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মৌলিক গণতন্ত্র কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

অথবা, মৌলিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল অগণতান্ত্রিক ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মৌলিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কেন অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা হয়?
অথবা, মৌলিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কেন ব্যর্থ হয়েছিল? বর্ণনা কর।
অথবা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় মৌলিক গণতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ কর।
অথবা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় মৌলিক গণতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণগুলো বর্ণনা কর ।
ভূমিকা :
পাকিস্তানে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে শাসনব্যবস্থায় যে পরিবর্তন নেমে আসে তার ফলে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের জীবনেও নেমে আসে এক অন্ধকারময় অধ্যায়। প্রচলিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাতিল করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ১৯৫৯ সালের ৭ অক্টোবর ১৮ নং নির্দেশ জারি করে মৌলিক গণতন্ত্র (Basic Democracy) প্রবর্তন করেন।

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মৌলিক গণতন্ত্রের ব্যর্থতার কারণসমূহ : মৌলিক গণতন্ত্রের কতকগুলো প্রশংসীয় দিক থাকলেও তা অচিরে স্বার্থান্বেষী মহলের প্রকৃত রাজনৈতিক অস্ত্রে রূপান্তরিত হয় এবং কায়েমী স্বার্থের ধারক ও বাহক এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। পাকিস্তানের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মৌলিক
গণতন্ত্রের ব্যর্থতার বহুবিধ কারণ বিদ্যমান। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. মৌলিক গণতন্ত্রের সর্বনিম্ন স্তরেই শুধু প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সুযোগ ছিল এবং অন্য কোন স্তরে জনগণের অংশগ্রহণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এর ফলে স্থানীয় শাসনব্যবস্থা স্বায়ত্তশাসিত সরকার হিসেবে বিকাশ লাভ করতে পারে নি।
২. গ্রামের নেতৃত্ব ছিল ধনী কৃষক শ্রেণির হাতে যারা কায়েমি স্বার্থবাদীগোষ্ঠীর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছিল।
৩. মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা এমনভাবে সংগঠিত হয় যে, এর সর্বস্তরে সরকারি কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কালক্রমে তা দুর্নীতি ও অনিয়মের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। সর্বস্তরে সরকারি কর্মচারীদের হস্তক্ষেপ স্থানীয় শাসনব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দেয়।
৪. মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থাধীনে স্থানীয় কাউন্সিলসমূহের সর্বস্তরে বিশেষ করে উচ্চস্তরসমূহে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি ছিল লক্ষণীয় বিষয়। প্রেসিডেন্ট ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের কেবল মাত্র রাজনৈতিক শাসক। তিনি সংবিধান কমিশন ও প্রতিনিধি কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করে ইউনিয়ন কাউন্সিল, ইউনিয়ন কমিটি এবং টাউন কমিটির সদস্যদের দ্বারা বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হতেন।
৫. প্রেসিডেন্ট আইন পরিষদের কাছে দায়ী ছিলেন না; তিনি দায়ী ছিলেন মৌলিক গণতন্ত্রীদের কাছে, যার সর্বস্তরে ছিল সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণ।
৬. প্রেসিডেন্ট স্বীয় ইচ্ছানুসারে প্রাদেশিক গভর্নরকে নিয়োগ ও বরখাস্ত করতে পারতেন। প্রাদেশিক মন্ত্রিবর্গও আইনসভার সদস্য ছিলেন না এবং এর নিকট দায়ীও ছিলেন না। এসব ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ছিলেন সর্বেসর্বা। কাজেই এটা স্পষ্টতই বলা যায় যে, কেন্দ্র ও প্রদেশ কোথাও গণতন্ত্র বিদ্যমান ছিল না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মৌলিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল অগণতান্ত্রিক। মৌলিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ইউনিয়ন কাউন্সিলের হাতে কিছু ক্ষমতা দিলেও প্রদেশ এবং কেন্দ্রে গণতন্ত্র না থাকায় এটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারেনি এ ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও প্রদেশ কোথাও গণতন্ত্র বিদ্যমান ছিল না।