সুফিবাদের মূলনীতিসমূহ কি?

উত্তর : ভূমিকা : আত্মিক পরিশুদ্ধি সাধনের আধ্যাত্মিক মতবাদই সুফিবাদ । সুফি সাধনার মাধ্যমে পরমাত্মার দিদার লাভ করা সম্ভব। পরমসত্তার সঙ্গে মিলনের আকাঙ্ক্ষা একজন সুফি | সাধকের পরিপূর্ণ মনুষ্যত্বের সাধনায় সার্থক করে তোলে। | সুফিবাদের মূলনীতিসমূহ সুফিবাদকে সহযোগিতা করে।
| সুফিবাদ হচ্ছে পরম সত্তাকে জানার ও চেনার আকাঙ্ক্ষা। নিম্নে সুফিবাদের মূলনীতিসমূহ উল্লেখ করা হলো :
→ সুফিবাদের মূলনীতি : আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক সাধনায় | নিয়ত হওয়া ও সাফল্য লাভের জন্য একজন সুফি-সাধককে
| কতগুলো নীতি বা পদ্ধতির অনুসরণ করতে হয়। সুফিবাদে এগুলোকে সুফিবাদের মূলনীতি বলা হয়। যেমন-
১. আত্মসমর্পণ : আল্লাহতে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ করা সুফিবাদের মূলনীতির মধ্যে অন্যতম। মুসলমান ঈমানদারদের ‘ইহকাল ও পরকাল’ সবকিছুই আল্লাহর জন্য সম্পর্কিত। | সুফিরা এ শাশ্বত জীবনের অনুসরণেই আত্মসমর্পণের বিশেষ নীতি মেনে চলেন।
→ আত্মসমর্পণের পদ্ধতি : সুফির পীর-মুর্শিদ, রাসুল (স.)- নূর-ই-তাজাল্লী ।
১. জিকির : আল্লাহকে স্মরণ করার নামই জিকির। সাধারণভাবে বলা যায় যে; আল্লাহর কোনো নাম বা কুরআনের কোনো আয়াত পুনঃপুন আবৃত্তি করার নামই জিকির । জিকির দুই প্রকার। যেমন- (i) জিকিরে জলি বা উচ্চঃস্বরের জিকির ও
(ii) জিকিরে খফি বা নীরবে জিকির।
২. কাশফ : অতীন্দ্রিয় অনুভূতির মাধ্যমে সাধক আল্লাহকে জানতে পারেন। কাশফ এমন এক ধরনের অন্তর্দৃষ্টি যার মাধ্যমে
সাধক ভূত-ভবিষ্যৎ, জগতের দৃশ্যনীয় অদৃশ্যনীয় আত্মা প্রভৃতি
সম্পর্কে জানতে পারে ।
৩. তওবা : পাপ বর্জন করা ও পাপ পথে অগ্রসর না হওয়ার প্রতিজ্ঞাকে তওবা বলে। ঔদাসীন্যের মোহনিদ্রা থেকে আত্মার জাগরণ এর তওবার প্রতিক্রিয়া। তাই, শুধু ত্যাগ নয়;
বরং জগতের সমুদয় বস্তু থেকে খোদার দিকে প্রত্যাবর্তনই হলো তওবা।
৪. হাল : এক বিশেষ ভাবানুভূতি বা আধ্যাত্মিক ও মানসিক অবস্থাকে হাল বলে। কাশফের দূরবর্তী অবস্থা হলো হাল। হাল
সুফি মনের এমন এক ভিত্তি যার উপর সুফির অন্তর্দৃষ্টি গড়ে ওঠে।
৫. তাওয়াক্কুল : সকল অবস্থায় আল্লাহর উপর নির্ভর করাই তাওয়াক্কুল। আল্লাহর ধ্যানে নিমজ্জিত থেকে সুফি অনেক সময় জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজন মিটানোর জন্যও কোনো চেষ্টা করে না।
৬. শোকর : সুখ বা দুঃখ সকল অবস্থায় আল্লাহর প্রতি কৃতিজ্ঞ থাকা এবং তার বিপুল নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হলো শোকর। সুফি তার সমগ্র জীবন সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
৭. খোদা প্রেম (ঈশকে খোদা) : প্রেমের মাধ্যমে সুফি তার নিজ সত্তাকে আল্লাহর সত্তার সাথে একীভূত করতে সমর্থ হন।
৮. ফানা ও বাকা : সুফি সাধনার চূড়ান্ত রূপ বাকা। ফানা ও বাকা সুফি সাধনার সর্বোচ্চ রূপ বা স্তর, ‘ফানা’ অর্থ আত্মা বিনাশ । এ স্তরে সুফি তন্ময়তার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত চেতনা মুছে দিতে বাকাবিল্লাহ বা ঐশী গুণে গুণান্বিত হন এবং তার সমুদয় ইচ্ছা আল্লাহর ইচ্ছায় পরিণত হয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে একথা বলা যায় যে, সুফি দর্শনের মূলনীতিগুলো ইসলামের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিকেরই সমন্বিত রূপ। তাই মানুষকে সাহায্য ও ‘অন্তর’ উভয় দিকে শান্তি পেতে হলে বাস্তব জীবনে সুফিবাদের এ মূলনীতিগুলো অনুশীলন করতে হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/