অথবা, সামাজিক স্তরবিন্যাসের শ্রেণি এবং মর্যাদাগোষ্ঠী সম্পর্কে লিখ।
অথবা, সামাজিক স্তরবিন্যাসের শ্রেণি এবং মর্যাদাগোষ্ঠী সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা, সামাজিক স্তরবিন্যাসের শ্রেণি এবং মর্যাদাগোষ্ঠী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্যতম প্রকরণ হচ্ছে শ্রেণি ও মর্যাদাগোষ্ঠী। এ প্রকরণ দ্বারা বুঝা যায় কোনো সমাজ বিশেষকরে আধুনিক শিল্পসমাজগুলো শ্রেণিবিভক্ত এবং এই শ্রেণিবিভক্তিকরণ ক্রমোচ্চভাবে সজ্জিত এবং একটি বিশেষ আর্থসামাজিকভাবে উন্নত সমাজে অবস্থান করে।
শ্রেণি এবং মর্যাদা গোষ্ঠী : আধুনিক সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধরন হলো সামাজিক শ্রেণি ও পদমর্যাদা। মূলত সামাজিক পদমর্যাদার নিরিখেই সামাজিক শ্রেণি নির্ধারিত হয়ে থাকে। সামাজিক শ্রেণিসমূহ হচ্ছে এক একটি বাস্তব গোষ্ঠী যাদের আইনগত ও ধর্মীয়ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। Karl Marx সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসকে অর্থনৈতিক ভিত্তিতে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। ‘Das Capital’ গ্রন্থে তিনি বলেন, “Classes are based on the basis of ownership and non-ownership of means, of production. Classes occupy different positions in the organization of production Classes are in the
struggle.”
শ্রেণির বৈশিষ্ট্য : শ্রেণি এবং মর্যাদা গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
১. উৎপাদনের উপায়ের মালিকানা এবং অমালিকানার উপর ভিত্তি করে দুটি শ্রেণি গড়ে উঠে।
২. এ শ্রেণিগুলো উৎপাদন সংগঠনে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং উৎপাদন সংগঠনে বিভিন্ন শ্রেণির অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন হয়।
৩. শ্রেণিগুলো পরস্পর শ্রেণিদ্বন্দ্বে লিপ্ত 1
৪. শ্রেণিগুলো প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ শ্রেণিস্বার্থ সম্পর্কে সচেতন।
কার্ল মার্কস শ্রেণিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
ক. রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন শ্রেণি (Class for itself), মাল খ. রাজনৈতিক চেতনহীন শ্রেণি (Class in itself).
মর্যাদা গোষ্ঠী : মর্যাদা গোষ্ঠী এর মূল ভিত্তি হলো Social honour। সমাজ যেভাবে Social honour-কে বিভাজন করে তারই ভিত্তিতে সমাজে Status group গড়ে উঠে। জীবনযাত্রার মান এ ধরনের সম্মান বিভাজনের নির্দেশক।
মর্যাদা গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূহ : ম্যাক্স ওয়েবার মর্যাদা গোষ্ঠীর চারটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন। যথা-
i. Social prestige বা সামাজিক খ্যাতি।
ii. Mode of living বা জীবনযাপন প্রণালি
iii. Education বা শিক্ষা।
iv. Occupation বা পেশা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক শ্রেণি এবং মর্যাদাগোষ্ঠী
স্তরবিন্যাসের আধুনিক প্রকরণ। বিশেষকরে আধুনিক শিল্প সমাজকে শ্রেণি বা মর্যাদাগোষ্ঠীতে বিভক্তকরণের মাধ্যমে সে সমাজের স্তরবিন্যাস বুঝাবার চেষ্টা করা হয়। অর্থনৈতিক উপাদানের ভিত্তিতে সমাজকে শ্রেণিতে ভাগ করা যায় আর মর্যাদার অসম বণ্টনের ভিত্তিতে সমাজকে মর্যাদা গোষ্ঠীতে ভাগ করা যায়।