সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনগুলো আলোচনা কর।

অথবা, সামাজিক নিয়ন্ত্রণের এজেন্সিগুলো সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
অথবা, সামাজিক নিয়ন্ত্রণের এজেন্সিগুলো আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনগুলোর বর্ণনা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজকে যদি প্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে হয় তাহলে উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি সামাজিক সংহতি ও শান্তিশৃঙ্খলা অপরিহার্য। সামাজিক সংহতি ও শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত করতে হলে সবাইকে কতিপয় সাধারণ নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। এ কারণে ব্যক্তির অসংযত আচরণ এবং কুপ্রবৃত্তিকে দমন বা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনসমূহ : সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলতে এমন একটা ব্যবস্থাকে বুঝায় যার মাধ্যমে সমাজবদ্ধ মানুষকে সুশৃঙ্খল ও সংহত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আর যেসব পন্থা বা পদ্ধতি সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহন বা এজেন্সি বলা হয়। সমাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহনসমূহ নিম্নরূপ :
১. পরিবার : পরিবার সামাজিক নিয়ন্ত্রণের প্রধান বাহন। পরিবার সামাজিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবারের অন্যতম কাজ হচ্ছে সন্তানসন্ততিকে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজের উপযুক্ত সদস্য হিসেবে গড়ে তোলা।
২. শিক্ষা : সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম বাহন হচ্ছে শিক্ষা। আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষার গুরুত্ব সর্বাধিক। প্রবাদ আছে, “Education is the backbone of a nation.” সুতরাং শিক্ষা ছাড়া কোন সমাজ উন্নতি লাভ করতে পারে না।
৩. ধর্ম : সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাহন হিসেবে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জনমত, রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় আইনকে হয়তোবা ফাঁকি দেয়া যেতে পারে। কিন্তু যে অতি প্রাকৃত শক্তি সবকিছু জানে, সবকিছু দেখে এবং সর্বোচ্চ বিচারক হিসেবে চূড়ান্ত রায়ের মাধ্যমে শাস্তি বা পুরস্কার প্রদান করবে তাঁকে ফাঁকি দিবে কেমন করে। এ অতি প্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস হলো ধর্ম |
৪. রাষ্ট্র : একথা সর্বজনস্বীকৃত যে, রাষ্ট্রের উপরই সমাজের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব বর্তায়। আর রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারই দেশের সংহতি ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও কার্যাবলি চালিয়ে যায়। রাষ্ট্র তিনটি উপায়ে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। যথা-পুলিশ, আদালত ও কারাগার।
৫. আইন : আইন সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম একটি বাহন। আইনের দুটি বিপরীতমুখী আবেদন রয়েছে। যথা :
(i) আইন জনসাধারণকে অসামাজিক কিছু করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় (ii) আইন কোন বিশেষ ক্ষেত্রে জনসাধারণকে কিছু করতে আবেদন জানায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাহনগুলো প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক বাহনগুলো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করে। কোনটির ভূমিকা কম কোনটির ভূমিকা বেশি এ কথা বলা যাবে না। এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, আমাদের সমাজকে সুসংহত রূপায়নের জন্য সামাজিক নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক।