সামাজিক গবেষণায় তত্ত্বের উপাদানসমূহ আলোচনা কর ।

অথবা, সামাজিক গবেষণায় তত্ত্বের উপাদানসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজ গবেষণা এবং তত্ত্ব অঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত । সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে একদিকে যেমন তত্ত্ব সৃষ্টি করা হয়, তেমনি তত্ত্বও নিত্য নতুন সমাজ গবেষণায় উৎসাহিত করে । বাস্তব পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে অনেক সময় তত্ত্বের সংশোধনীও আনা হয়। এ প্রক্রিয়ার ফলে তত্ত্ব এবং গবেষণা পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে । আর এতে করে তত্ত্বের যথার্থতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, নিশ্চয়তা ও সংগতি বিধানে গবেষণা কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সামাজিক গবেষণায় তত্ত্বের উপাদান : এখানে তত্ত্ব এবং সামাজিক গবেষণায় তত্ত্বের ব্যবহার উল্লেখপূর্বক তত্ত্বের উপাদানসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. প্রত্যয়,
২. বিভিন্নক বা চলক,
৩. প্রস্তাবনা,
৪. আঙ্গিক,
৫. ভাষা প্রভৃতি। নিয়
১. প্রত্যয় : সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষা সামাজিক মানুষের অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরে। যেহেতু মানুষের সামাজিক সম্পর্ক প্রাকৃতিক জগতের মতো দৃষ্টিগ্রাহ্য, অবয়ব বিশিষ্ট অথবা সহজ অনুধাবনীয় নয়, সেহেতু এ সম্পর্কের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য, ধরন ও ধারণা মূলত ভাষার মধ্যেই নিহিত। যাহোক, প্রথমেই জানা দরকার প্রত্যয় বলতে কি বুঝায়? প্রত্যয় একটি শব্দ হিসেবে প্রায়ই পরিলক্ষিত হয়। যেমন- গণতন্ত্র একটি শব্দ। বস্তুত প্রত্যয়গত অভিধা বিভিন্ন হয়ে যেতে পারে যদি তা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যক্ত করা হয়। মনোবিজ্ঞানের জনতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনমত, সাহিত্যের লোককাহিনী সেসব শাস্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ অর্থ প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে । সামাজিক বিজ্ঞানে এমন অনেক শব্দ ব্যবহৃত হয় যেগুলো বিশেষ অর্থ ব্যবহৃত হয়। প্রত্যয়সমূহ নিছক নির্দেশক চিহ্ন নয়, বরং ভাবা বা ধারণা সঞ্জাত । সে কারণে প্রত্যয়কে বিমূর্ত বা abstact বলা হয়ে থাকে ।
Phillips, “Concepts are abstructions used by the scienist as building blocks for the development of proposition and theories and which explain and project phenomena.” , “A concept is an abstructions used by scientist as building blocks for some words in order to be able to communicate about it.” Emory মূলত প্রত্যয় মানুষের উচ্চমার্গীয় উপলব্ধির প্রমাণ। প্রত্যক্ষণ যেখানে প্রাথমিক অনুভবের সোপান, ধারণায়ন সেখানে বোধি ও সচেতনতার নির্দেশক। প্রত্যয় লাভ মানবিক সচেতনতার এক ধরনের সক্রিয় অবস্থা যা প্রত্যক্ষণের স্তরকে অতিক্রম করে যায়। প্রত্যয় সাধারণ একটি শব্দকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে দেখা গেলেও একাধিক শব্দের সন্নিবেশে প্রত্যয় নির্মাণ হতে পারে।

২. বিভিন্নক বা চলক : বিভিন্নক বলতে এমন কিছুকে বুঝায়, যা পরিবর্তিত হয়। মূলত বিভিন্নসমূহ প্রত্যয় বা প্রগঠনের আরেক রূপ। প্রাকৃতিক ও সামাজিক জগতের প্রতিটি বস্তুর মধ্যে পরিবর্তনশীলতা ও পার্থক্য চিরন্তন সত্য। পার্থক্য বা Variation আছে বলেই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে। বাস্তব প্রপঞ্জ জানার জন্য প্রত্যেকটিকে গুণ বা attriubute বলে । যেমন-লিঙ্গ যদি একটি বিভিন্নক হিসেবে গণ্য করা হয় তবে তার দুটি গুণ আছে বলে ধরতে হবে- ক.পুরুষ ও খ. মহিলা।
৩. প্রস্তাবনা : Reynolds এর মতে, “The word proposition is used to reter to any idea or hunch that is presented in the form of a scientific statement.” অনেকেই তত্ত্বের মৌলিক উপাদান হিসেবে প্রস্তাবনাকে বিবেচনা করেছেন উক্তির সমর্থক হিসেবে এবং অসুসিদ্ধান্ত, অভিজ্ঞতাভিত্তিক সাধারণীকরণ, এ্যাক্সিডম, পস্টরেট ও থিওরেমকে যথাক্রমে প্রস্তাবনার বিভিন্ন ধরন মনে করেছেন। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, “A proposition is simply a statement about one or more concepts or vairables.” তত্ত্বের মধ্যে যে সিদ্ধান্ত বা বক্তব্যগুলো অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোকে মোটমুটি মন্তব্যমূলক প্রস্তাবনা বলা চলে ।
এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় প্রস্তাবনা দুটিকে ক্যাক্সিডম বা পস্টুলেট বলে, কারণ এগুলো থেকে তৃতীয় বাক্যটির উৎপত্তি হয়েছে । এক্সিডম ও পস্টুলেট মোটামুটি একই অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
৪. আঙ্গিক : তত্ত্ব গঠনের ক্ষেত্রে আঙ্গিক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান । কারণ একটি সুনির্দিষ্ট আঙ্গিক বা পদ্ধতিকে অনুসরণ করেই তত্ত্বের বিভিন্নককে বিশ্লেষণের মাধ্যমে অনুসিদ্ধান্ত ও তত্ত্ব গঠন করা হয়ে থাকে ।
৫. ভাষা : তত্ত্বের গঠন ও প্রকাশ ভাষার মাধ্যমে । তাই ভাষা তত্ত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত। তত্ত্বের ভাষা হবে সহজ, যুক্তিপূর্ণ ও প্রাঞ্জল । ভাষার ধরনই তত্ত্বের বোধগম্যতা নির্ধারণ করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণায় তত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ বহুবিধ,ব্যবহার রয়েছে। আর তত্ত্ব গঠন করা হয় এর বিভিন্ন উপাদানের সাহায্যে । তত্ত্বের উপাদানসমূহ আবার তত্ত্বকে সহজে বোধগম্য করতেও সাহায্য করে থাকে ।