পরিসংখ্যানের পরিধি বা ক্ষেত্রগুলো আলোচনা কর ।

অথবা, পরিসংখ্যানের বিস্তৃতি বিশ্লেষণ কর।
অথবা, পরিসংখ্যানের পরিধি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
পৃথিবী আজ এগিয়ে অনেক দূরে। আজ সফলতার স্বর্ণদুয়ারে মানুষের আবির্ভাব হয়েছে । পৃথিবীর গণ্ডিকে ছেড়ে মানুষ গ্রহ গ্রহাস্তরে পাড়ি জমাচ্ছে। জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা মানুষের সফল পদচারণায় মুখর। জ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে সামাজিক পরিসংখ্যান আলোচনা করে। সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে
পরিসংখ্যানের ব্যবহার সামাজিক বিজ্ঞানকে মানুষের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।
পরিসংখ্যানের পরিধি : পরিসংখ্যানের উৎপত্তি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি সম্পাদনের প্রয়োজনেই এর উদ্ভব ঘটে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন হিসাবনিকাশ সংরক্ষণের জন্য মূলত পরিসংখ্যানের প্রয়োজন অনুভূত হয়। এছাড়াও ধর্ম মন্দির, নগর পরিকল্পনা সমাধি প্রভৃতি তৈরিতেও এর ব্যবহার হতো। পরিসংখ্যানের পরিধি সম্পর্কে নিম্নে
আলোচনা করা হলো : পরিসংখ্যানের পরিধি আলোচনা প্রসঙ্গে বিশ্বসভ্যতাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনার প্রয়োজন ।
ক. আদিম যুগে পরিসংখ্যান :
১.খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫০ অব্দে মিশরে পিরামিড তৈরির জন্য পরিসংখ্যানের ব্যবহার হয় ।
২.খ্রিস্টপূর্বে ২৭০০ অব্দে সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা, বাটখারা তৈরি ও স্কেল তৈরিতে এর ব্যবহার হয় ।
৩.খ্রিস্টপূর্ব ২০৫০ অব্দে ব্যাবিলনীয় সভ্যতা পরিসংখ্যানের ব্যবহার শুরু করে।
৪.খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে মিশরের রাজা দ্বিতীয় রেমেসিস জমির হিসাব সংরক্ষণের জন্য পরিসংখ্যানের ব্যবহার করেন ।
৫.খ্রিস্টপূর্ব ১২০০-৩৩৭ অব্দে গ্রিকরা পরিসংখ্যানকে কাজে লাগায়।
৬. খ্রিস্টপূর্ব ৪৭৬ অব্দ পর্যন্ত রোমান সভ্যতার প্রতি পরতে পরতে পরিসংখ্যানের ব্যবহার হয়েছে।
৭.খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে পরিসংখ্যান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
খ. মধ্যযুগে পরিসংখ্যান : মধ্যযুগ বলতে বুঝায় সামস্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা। সমগ্র মধ্যযুগে জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশ শুরু হয় । রেনেসাঁ, রিফরমেশনের যুগে লর্ডদের জমি, ভূস্বামী, কর ও খাজনা, সামরিক শক্তি প্রভৃতির হিসাবনিকাশে পরিসংখ্যানের ব্যবহার হতো।
গ. আধুনিক যুগে পরিসংখ্যান : শিল্পবিপ্লব ও ফরাসি বিপ্লবোত্তর জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার, পুঁজির বিকাশের সাথে সাথে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে পরিসংখ্যান নেই । জন্ম, মৃত্যু, আয়, ব্যয়, উৎপাদন, বিক্রি, লাভ, ক্ষতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, শিল্প, কলাসহ সর্বক্ষেত্রে পরিসংখ্যান বিস্তৃত । এভাবে দেখা যায়, পরিসংখ্যানের উৎপত্তি লগ্ন থেকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর পরিধি বিস্তৃত হয়েছে । আধুনিক রাষ্ট্রের গতিশীলতা পরিসংখ্যানের অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, পরিসংখ্যান একটি বিস্তৃত বিষয় । Yale and Kendall বলেছিলেন, “By statistics we mean quantitative data affected to a market extent by a multiplicity of causes.” তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে আধুনিক সকল কর্মকাণ্ডে পরিসংখ্যানের স্পর্শ সুস্পষ্ট। আদিমকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের বিচরণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।