সামাজিক ও অসমতা দূরীকরণে সামাজিক গতিশীলতার গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

অথবা, সামাজিক অসমতা নিরূপণ কর।
অথবা, সামাজিক অসমতা দূরীকরণে দূরীকরণে সামাজিক গতিশীলতার যৌক্তিকতা এ সম্পর্কে যা উপাদান সামাজিক গতিশীলতা অপরিহার্য জান লেখ।তিন্ডিী কারীমার কথাম
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গতিশীলতা সমাজ পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার অন্যতম ধারক ও বাহক। পৃথিবীর বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় অনেক নতুনকে পুরাতন রূপে আবার অনেক পুরাতনকে নতুন রূপে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে সমাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় সমাজ সর্বদা পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাজ অনেক কিছু গ্রহণ করে, আবার অনেক কিছু ছেড়ে দেয়। সেক্ষেত্রে সমাজকে Dynamic Process এর মধ্যে সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। সামাজিক স্তরবিন্যাসে এ পরিবর্তনশীল বা গতিশীল প্ৰক্ৰিয়া প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।
Ake 250 সামাজিক অসমতা দূরীকরণে গতিশীলতার ভূমিকা : অসমতা বা Inequality সামাজিক উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধক। আবার অনেক সমাজবিজ্ঞানী তাত্ত্বিক সামাজিক উন্নয়নে এ অসমতাগুলোকে প্রভাবুক, নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। মূলত অসমতা ছাড়া সমাজ নেই। আবার এ অসমতাগুলোর কারণেই মানুষের মাঝে বিভিন্ন কর্মচঞ্চলতা দেখা যায়। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষ সমাজের প্রগতি, উন্নতি তথা সমৃদ্ধির ধারক ও বাহক। জন্মসূত্রে মানুষ বিভিন্ন স্তরবিন্যাসের শিকার। এ স্তরবিন্যাসের কারণে সমাজে মানুষে মানুষে গড়ে উঠে শ্রেণি ব্যবধান। স্তরবিন্যাসের ক্রমোচ্চ ধারণার অন্যতম উৎস গতিশীলতা। গতিশীলতা বলতে আমরা সে পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে বুঝে থাকি যেখানে ব্যক্তি, সমাজ, এমনকি রাষ্ট্র সবসময় পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়ায় মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবস্থা ধারণ করে থাকে। সামাজিক গতিশীলতার এ প্রক্রিয়ায় ক্রমোচ্চ মানকে নির্দেশ করা হয়, যেখানে ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সমাজ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে উচ্চমান ধাপে উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টায় লিপ্ত। এক্ষেত্রে গতিশীলতার প্রক্রিয়ায় সেসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেগুলোর মাধ্যমে সমাজ থেকে অসমতা দূর করা যায়। উদাহরণ হিসেবে আমরা একজন ব্যক্তিকে নিলে তার দিক থেকে বিভিন্ন বিষয় যেমন- কুসংস্কার, অসাধ্য সাধনের অপচেষ্টা, সামাজিক অপরাধমূলক কাজ পরিহার প্রভৃতি বিষয়ে যথাসাধ্য উন্নতি, যার মাধ্যমে অন্যান্য ব্যক্তির সাথে সমাজভেদে তার একটি স্থান চিহ্নিত করা যায়। এক্ষেত্রে উপযুক্ত বিষয়ে যদি ঐ ব্যক্তির সার্বিক প্রভূত উন্নতি সাধিত হয় তাহলে যথার্থ সামাজিক গতিশীলতা ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঘটে থাকবে।
অনুরূপভাবে একটি সমাজের গতিশীলতাও আমরা নিরূপণ করতে পারি। তবে উভয়ের মাঝে পার্থক্য এই যে, সমাজ চিরন্তন, যার স্রোত পৃথিবীর শুরু থেকে এবং এ সাজানো পৃথিবী ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। অপরদিকে, ব্যক্তির গতিশীলতা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে গতিশীল থাকে, যার পর্যায় কখনো উঁচু আবার কখনো নিম্নে পতিত হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তির চেষ্টা, সততা, বিবেক প্রভৃতি বিষয় কাজ করে থাকে। অন্যদিকে, ব্যক্তির আপেক্ষিক অবস্থানের উপরই সমাজের অবস্থান নির্ভরশীল। সামাজিক গতিশীলতার এ উপাদানগুলো (যেমন- ব্যক্তি, গোষ্ঠী, পরিবার) পরস্পর সম্পর্কযুক্ত (Inter-related) অর্থাৎ এ বিষয়গুলোর সার্বিক উন্নতি সাধিত হলে সমাজের জন্য ইতিবাচক, আবার সার্বিক অবস্থা নিম্নে ধাবিত হলে তাকে বলা যায় সমাজের জন্য নেতিবাচক। আমরা অবশ্যই ইতিবাচক এবং নেতিবাচক সমাজ দেখতে পারি। আমাদের চোখের সামনেই বিদ্যমান সমাজব্যবস্থায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের সামাজিক গতিশীলতার প্রক্রিয়া ইতিবাচক বা ক্রমোচ্চমান ধারায় রূপান্তরের মাধ্যমে নিজেদেরকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশ, জাতি থেকে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আলাদাভাবে চিহ্নিত করার অবস ্থান তৈরি করে ফেলেছে। যেমন- ইউরোপ, আমেরিকার অধিকাংশ দেশ, যাদের সামাজিক গতিশীলতার ইতিবাচক বা ক্রমোচ্চমান ধারা আজ অবধি বিদ্যমান এবং বর্তমান সমাজ সভ্যতার নিয়ন্ত্রক তাদেরকেই বলা হচ্ছে। সুস্পষ্ট কথায়, বর্তমানে আমেরিকা ও ইউরোপের উন্নতি সামাজিক গতিশীলতার ইতিবাচক ফল। অন্যদিকে, সামাজিক গতিশীলতার নেতিবাচক দিক বলতে আমরা সে দিককে বুঝে থাকি, যেখানে সামাজিক উন্নয়নের ধারার বিপরীতে অবস্থান অথবা উন্নত সমাজের নেতিবাচক দিকগুলোর অনুসরণ করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে সমাজে বেড়ে যায় দ্বন্দ্ব সংঘাত, ব্যাপক দরিদ্রতা, সর্বোপরি যাকে আমরা স্তরবিন্যাস বা অসমতা বলে থাকি। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশসহ আফ্রিকার কতিপয় দেশগুলোর কথা বলা যায়। ভারতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জাতিবর্ণ প্রথা বিদ্যমান, আর সে কারণেই দেশের কতিপয় অংশের প্রভূত উন্নয়ন ঘটার পরও সার্বিক দিক থেকে ভারতকে একটি উন্নত দেশের দিকে স্থান দেয়া যায় না। বাংলাদেশের কথা বলাই বাহুল্য, সামাজিক অসমতার ধরনগুলো এখানে
এত করুণ যে, নারীদের অনেক সময় পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত এসব সমাজে অসমতার অন্যতম কারণ সভ্যতার ইতিবাচক গতিশীলতার বিপরীতে অবস্থান, যা এ সমাজগুলোকে পূর্বের অবস্থানে বা আর্থসামাজিক উন্নতির প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে, সামাজিক গতিশীলতা এ অসমতাগুলো ভেঙে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম। যদি পরিবর্তনের ধারায় কোনরূপ উল্টোপথের সন্ধান না করে সমাজের গতিশীলতার সাথে তাল মিলিয়ে চলা যায়, তাহলে এ গতিশীলতা সামাজিক উন্নয়নে এবং অসমতা দূরীকরণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। বর্তমান বাংলাদেশের অবস্থান পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, দেশের সার্বিক মানের ক্ষেত্রে এখনো সামাজিক গতিশীলতার উল্টোপথে যাত্রা বিরাজমান; যেখানে ব্যাপক ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার তাদেরকে পূর্বের অবস্থান থেকে অনেক ক্ষেত্রে নিম্নরূপে নামিয়ে রাখছে। পৃথিবীর পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়ার সাথে সামাজিক গতিশীলতার সুষম মিশ্রণ ঘটিয়ে আমাদের সমাজে সামাজিক গতিশীলতার ইতিবাচক বা ক্রমোচ্চমান তৈরি হোক এটাই প্রত্যাশা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গতিশীলতা এবং সামাজিক অসমতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি বিষয়, যার একটির অবস্থানের পরিবর্তনের ফলে অন্যটির উপর প্রভাব পড়ে। সেক্ষেত্রে সামাজিক গতিশীলতার ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক অসমতা বা স্তরবিন্যাস দূরীকরণের মাধ্যমে সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। এ অর্থে বলা যায়, সামাজিক উন্নয়নে সামাজিক গতিশীলতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4/