সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব বর্ণনা কর।

অথবা, সাক্ষাৎকারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সাক্ষাৎকারের তাৎপর্য আলোচনা কর।
অথবা, সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : ব্যক্তি সমাজকর্মে সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সাক্ষাৎকারের উপরই মনোসামাজিক অনুধ্যান এবং সমাজকর্মীর সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া নির্ভর করে।
সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব : নিম্নে সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো :
১. তথ্যসংগ্রহ : ব্যক্তির মনোসামাজিক তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারের কোন বিকল্প নেই বললেই চলে।সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই ব্যক্তিকে অনুধাবন করা যায়, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জানা যায়, প্রত্যাশা সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং আর্থসামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
২. পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন : পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন বা র‍্যাপো গঠন ছাড়া ব্যক্তির কাছ থেকে যেমন কোন তথ্য ও পাওয়া যায় না, তেমনি ব্যক্তির সমস্যার স্বরূপ নির্ণয় করে তার সমাধানও দেওয়া যায় না। সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর সমাযোজন স্থাপিত হয়; মতামত বিনিময় ও একে অপরকে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এভাবে ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর পেশাগত সম্পর্ক রচিত হয়।
৩. সাহায্যার্থীর মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ: সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তির সাথে সমাজকর্মীর সরাসরি সমাযোজন স্থাপিত হয়। সমাজকর্মী ব্যক্তির সাথে কথাবার্তা বলতে পারেন; তার শারীরিক প্রকাশভঙ্গি, চলাফেরা, হাবভাব ইত্যাদি অবলোকন করতে পারেন। এর মাধ্যমে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর মানসিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণেরও সুযোগ লাভ করেন।
৪. সাহায্যার্থীর নিকট প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধা ব্যাখ্যা : সাহায্যার্থী প্রতিষ্ঠানের নিকট অনেক কিছু প্রত্যাশা করতে পারে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সাহায্যার্থী কি ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবে, কি ধরনের সেবা পাবে- বস্তুগত না অবস্তুগত ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদানের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
৫. সাময়িকভাবে মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি প্রদান : সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি বা সাহায্যার্থী সমস্যার কবলে পড়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে। হতাশা, দ্বন্দ্ব, ভীতি, অসহায়ত্ব ইত্যাদি তার ভিতরে কাজ করে। সে নিজেকে পৃথিবীতে বড়ই একা ও অসহায় ভাবে। এরূপ ক্ষেত্রে সাহায্যার্থীকে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে অসহায়ত্ব কাটিয়ে তুলে মানসিক যন্ত্রণা থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি প্রদানে সাহায্য করা হয়।
৬. সাহায্যার্থীকে দায়িত্ব সচেতন করে তোলা : সাহায্যার্থী অনেক সময় মনে করে সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পেতে তার কোন দায়দায়িত্ব নেই। সে সমাজকর্মীর নিকট থেকে সাহায্য প্রাপ্ত হলেই এর সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু সমাজকর্ম দায়িত্ব পালনে বিশ্বাসী। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব ও করণীয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে তাকে দায়িত্ব সচেতন করে তোলা হয়।
৭. সাহায্যার্থীর সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ : সাহায্যার্থীর সুপ্ত ক্ষমতা বিকাশের ক্ষেত্রেও সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব রয়েছে।সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর সাথে সরাসরি মিলিত হন, তার সাথে কথাবার্তা বলেন, তার সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করেন। ফলে এর মাধ্যমে ব্যক্তির শক্তি, সামর্থ্য ও আত্মবিশ্বাস সম্পর্কেও সমাজকর্মী অবগত হন। এ প্রেক্ষিতে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশ সাধনে সহায়তা করতে পারেন।
৮. সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা : পরিবর্তিত আর্থসামাজিক অবস্থার সাথে সাহায্যার্থীকে সামঞ্জস্য বিধানের ক্ষেত্রেও সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। সমাজকর্মী এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা, পরামর্শ ও সাহস দান করেন।
৯. মূল্যায়ন : সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই সমাজকর্মী সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার সফলতা ও ব্যর্থতার মূল্যায়ন করতে পারেন। প্রথম সাক্ষাৎকারের পরবর্তী সাক্ষাৎকার থেকে সমাজকর্মী ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক ভূমিকা, ক্ষমতার পুনরুদ্ধার, সামাজিকভাবে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা ইত্যাদি পরিমাপ করতে পারেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি, সমাজকর্মে সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব অপরিসীম।সাক্ষাৎকার ছাড়া ব্যক্তির মনোসামাজিক অনুধ্যান সম্ভব হয় না; ব্যক্তির সমস্যাও চিহ্নিত করা যায় না। সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এ্যানেট গ্যারেট বলেন, “সাক্ষাৎকার কখনো শুধু তথ্যসংগ্রহের উদ্দেশ্যে, আবার কখনো ব্যক্তিকে সাহায্য প্রদানের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়। তবে এ প্রসঙ্গে Gordon Hamilton এর বক্তব্য সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য।সাক্ষাৎকারের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, “The interview can motivate, can teach, can secure information,can help clients to bring out things which are bothering.”