সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানসমূহ আলোচনা কর ।

অথবা, সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, সংস্কৃতির দুইটি উপাদান সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, সংস্কৃতির বাস্তব ও মানসিক উপাদানসমূহ সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
সমাজবদ্ধ মানুষের সংস্কৃতি বিদ্যমান। সুপ্রাচীন কাল থেকে আজ অবধি সকল যুগের এবং সকল জায়গার মানবসমাজেরই স্বতন্ত্র সংস্কৃতির সন্ধান পাওয়া যায়। সংস্কৃতি হলো মানুষের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য এবং এ বৈশিষ্ট্যই মানবসমাজকে স্বতন্ত্র মর্যাদায় মণ্ডিত করেছে।
সংস্কৃতির উপাদান : সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানকে মূলত দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। সংস্কৃতির উপাদানসমূহের এ দুটি ভাগ হলো :
১. বাস্তব বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপাদান,
২. মানসিক বা অবস্তুগত উপাদান।
১. বাস্তব উপাদান : মানুষের সংস্কৃতি যখন বাস্তব আকারে প্রকাশিত হয় বা বাস্তব রূপ ধারণ করে তখন তাকে বলা হয় সংস্কৃতির বাস্তব উপাদান। মানুষের মানসিক ধারণা ও মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটে সংস্কৃতির বাস্তব উপাদানসমূহের মাধ্যমে। সংস্কৃতির বাস্তব উপাদানগুলোকে বলা হয় অপ্রতীকী উপাদান। সমাজবদ্ধ মানুষ তার নিজের জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধির এবং কর্মকুশলতার ভিত্তিতে বিভিন্ন বস্তু উৎপাদন করে। এসব বস্তুর মধ্যে আবার কতকগুলোর উপর স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গির্রি প্রেক্ষিতে বিশেষ মূল্যমান বা আদর্শ আরোপ করা হয়। এসব আদর্শমণ্ডিত বা মূল্যমানযুক্ত বাহ্যবস্তু সংস্কৃতির দ্যোতক বলে পরিগণিত হয়। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে হিন্দুদের পীঠস্থানের মঠ-মন্দির, উপাসনা গৃহ, স্কুল-কলেজ প্রভৃতি পাঠমন্দির ইত্যাদি ইমারতসমূহের কথা বলা যায়। মানুষ নিজের কর্মকুলশলতার দ্বারা এগুলো গড়ে তুলেছে। এ সমস্ত ঘরবাড়ি কেবল ইট-পাথর, চুন-সুরকি বা সিমেন্ট-বালির সমাবেশ মাত্র নয়। স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি বা মূল্যবোধ অনুযায়ী মানুষ
এগুলোর উপর মূল্যমান বা আদর্শ আরোপ করে থাকে। এসব বাহ্যবস্তু তাৎপর্যপূর্ণ। স্বভাববতই এসব বস্তু বিশেষ সংস্কৃতির পরিচয়বাহক। এগুলো হলো সংস্কৃতির বহিরঙ্গ।
২. মানসিক উপাদান : সমাজবদ্ধ মানুষের সমাজ-সংস্কৃতিতে প্রতীকমূলক উপাদানসমূহের ভূমিকাও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মানব সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত কতকগুলো উপাদান সমাজবদ্ধ ব্যক্তিবর্গের আদর্শ বিশ্বাস, ধ্যানধারণা, আনন্দ বেদনা প্রভৃতি মানসিক অনুভূতি নির্দেশ করে থাকে। সংস্কৃতির এসব উপাদানকে বলা হয় মানসিক বা প্রতীকমূলক উপাদান। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সংগীত, সাহিত্য, নাটক, শিল্পদর্শন প্রভৃতির কথা বলা যায়। এগুলো সমাজবদ্ধ মানুষের সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে প্রতিপন্ন হয়। এগুলো হলো সংস্কৃতির প্রতীকী উপাদান। এসব উপাদানের মাধ্যমে সমাজব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গের আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ বেদনা, চিন্তাচেতনা প্রভৃতি অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার অভিব্যক্তি ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সংস্কৃতির এ দুটি উপাদান ছাড়া মানবজীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।