শ্রম কল্যাণ কী?

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ আধুনিক শিল্প ব্যবস্থায় শ্রমকল্যাণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। শ্রমিকদের জীবনমান, নীতি নৈতিক ও সামাজিকীকরণের নিমিত্তে এই শ্রম কল্যাণের যাত্রা। শ্রমজীবী মানুষের সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবে শিল্পব্যবস্থা হয়েছে সমৃদ্ধ। তাই শ্রমিক শ্রেণির কল্যাণের মাধ্যমে সহজেই শিল্পোয়ন ঘটানো সম্ভব। শ্রমকল্যাণ হচ্ছে মজুরির বাইরে শ্রমিকদের পাওনা অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা। যা তাদের সুষ্ঠু বিকাশের পথ নির্দেশ করে থাকে। তাই বিশ্বের অন্যান্য
দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শ্রমকল্যাণের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা ঃ নিম্নে বিশিষ্ট কিছু সমাজবিজ্ঞানীর মতানুযায়ী শ্রমকল্যাণকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়াস চালানো হলো :
আর্থার জেম সটড. এর মতে, “শ্রমকল্যাণ হচ্ছে মজুরির বাইরে শ্রমিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সামাজিক আরাম ও উন্নয়নে প্রাপ্য যা শিল্পের জন্য অপরিহার্য নয়।”
Oxford Dictionary অনুযায়ী, “শ্রমিকদের জীবন প্রাচুর্যময় করার প্রচেষ্টাই শ্রমকল্যাণ ।”
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা OLO-এর ভাষ্য মতে, “শ্রমকল্যাণ বলতে ঐসব সেবা ও সুযোগ সুবিধার সমষ্টিকে বুঝায় যা সুযোগ-সুবিধার সমষ্টিকে বুঝায় যা কারখানার ভেতরে ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রচলিত, যাতে শ্রমিকরা স্বাস্থ্যকর ও উপযুক্ত পরিবেশে করতে পারে ও যা সুস্বাস্থ্য নৈতিকতার জন্য সহায়ক বলে গণ্য হতে থাকে।
সাধারণ অর্থে : সাধারণ অর্থে শ্রমকল্যাণ হচ্ছে এমন এক কর্মসূচি যা শিল্প ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শ্রমিকদের কর্ম অভ্যন্তরে ও বাইরে আর্থ-মনো দৈহিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভৃতি দিকের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ফলশ্রুতিতে এইসব সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রমিকরা অধিক উৎপাদনে তৎপর হতে যথেষ্ট সক্ষম হয়।
→ শ্রমকল্যাণ ঃ কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কল কারখানার শ্রমিকদের আর্থিক, সামাজিক ও মানবিক কল্যাণের নিমিত্তে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে মূলত শ্রমকল্যাণ হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট মজুরির পাশাপাশি যাতে তাদের কর্মদক্ষতা, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদন প্রভৃতি বিষয়াদির সুষ্ঠু সুরাহা হতে
পারে তজ্জন্য গৃহীত কার্যক্রমের সমষ্টিকেই মূলত শ্রমকল্যাণ হিসেবে চিহ্নিত হয় উন্নত শিল্প ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে দ্রুত অবশ্যই শ্রমকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
→ মোট কথা ঃ শ্রমকল্যাণ শিল্প সংক্রান্ত এক ধারণা। শিল্প কারখানাগুলোর শ্রমিকদের আর্থিক সামাজিক নৈতিক সাংস্কৃতিক ও শারীরিক সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যেই পরিচালিত হয় শ্রম কল্যাণের প্রতিটি কার্যক্রম। ফলশ্রুতিতে শিল্পোৎপাদন পায় নতুন মাত্রা।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, শ্রমকল্যাণ হচ্ছে শ্রমিকদের কল্যাণ সাধন। শ্রমকল্যাণের মাধ্যমে শ্রমিকশ্রেণীর আর্থ-সামাজিক অস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে। প্রতিটি দেশেই শ্রমকল্যাণের অন্তর্ভুক্তি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে । শ্রমকল্যাণের মাধ্যমে উৎপাদনে গতিশীলতা বাড়ানো সম্ভবপর হতে পারে। এই শ্রমকল্যাণ সরকারী ও বেসরকারী উভয় পর্যায়েই পরিচালিত হয়ে থাকে। তাই আগামীতে উন্নত শিল্পব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অগ্রগতি সাধনে শ্রমকল্যাণের প্রয়োগে নিপুণতা দেখানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।