শ্রম কল্যাণের ধরন/ শ্রেণি বিন্যাস তুলে ধর।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ যন্ত্রের সাথে নিয়ত যুদ্ধরত মেহনতি মানুষের মঙ্গলার্থে শিল্প বিপ্লবোত্তরকালে শ্রম কল্যাণ ধারণটি
সম্প্রসারিত হয়। শ্রমজীবী মানুষের সুদীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসেবে বিজ্ঞজনরা উৎপাদনের স্বার্থেই তাদের কল্যাণে প্রাপ্য মজুরির বাইরে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করে না যা শ্রমকল্যাণ হিসেবে গণ্য হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও শ্রমকল্যাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়ে থাকে। সুতরাং শ্রমিকদের জীবন প্রাচুর্যময়
করার প্রচেষ্টাই শ্রমকল্যাণ । শ্রমকল্যাণের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই শ্রমকল্যাণের বেশ কিছু ধরন রয়েছে।
→ শ্রমকল্যাণের ধরনঃ শ্রমকল্যাণের ধরন/শ্রেণিবিন্যাস নিম্নে আলোচিত হলো ঃ শ্রমকল্যাণ সংক্রান্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ
কার্যক্রম ও ব্যবস্থাবলির ভিত্তিতে শ্রমকল্যাণকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. আইনগত শ্রমকল্যাণ : শ্রমকল্যাণের এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাগ। যেসব কার্যক্রম আইনগতভাবে সরকার কর্তৃক নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা মালিক পক্ষের উপর প্রবর্তিত হয় সেগুেলো আইনগত শ্রমকল্যাণ যেমন-উপযুক্ত
কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, ক্যান্টিন, পয়ঃনিষ্কাষণ, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রভৃতি সংক্রান্ত আইন সরকার কর্তৃক প্রণীত হয় এবং মালিক পক্ষকে এগুলো মানতে বাধ্য করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ১৯২৩ সালের শ্রমিক ক্ষতিপূরণ আইনের উল্লেখ করা যায় । সুতরাং আইনগত শ্রমকল্যাণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। যেকোনো প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে এগুলো আদায়ের জন্য মামলা করা সম্ভব।
২. স্বেচ্ছামূলক শ্রমকল্যাণ ঃ শ্রমকল্যাণের আরেকটি ভাগ স্বেচ্ছামূলক শ্রমকল্যাণ নামে পরিচিতি লাভ করে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বা শ্রমিকদের উৎসাহ উদ্দীপনা ও দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে মালিকপক্ষ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে তাই স্বেচ্ছামূলক শ্রমকল্যাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমনঃ বিনোদন কর্মসূচি। তবে এ ক্ষেত্রে
শ্রমিককে মেশিন নয়, বরং উৎপাদনের অপরিহার্য উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মাঝে মাঝে মালিক ছাড়াও
যেকোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করেত পারে। যেমন : আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা (ILO)। ফলশ্রুতিতে শ্রমিকদের কর্মস্পৃহা অনেকগুণ বেড়ে যায়। এবং উৎপাদনে তারা যথার্থ মনোযোগ নিবেশ করে।
৩. সমঝোতামূলক শ্রমকল্যাণ ঃ সমঝোতামূলক শ্রমকল্যাণ শ্রমকল্যাণের শেষের ধাপ। এতে মালিক, শ্রমিক, সরকার প্রমুখ পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে, তাই সমঝোতামূলক শ্রমকল্যাণ বলে, বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমন : সামঞ্জস্য বিধান সমস্যা বা কলহ বিবাদের অবসান এরূপ সমঝোতা হয়ে থাকে ট্রেড
ইউনিয়ন ফেডারেশন, দরকষাকষি সংস্থা, সরকার, মালিক প্রমুখদের সাথে। ফলে শিল্প কারখানায় শ্রমিকের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে। যা তাদের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক পথচলাকে বেশ ত্বরান্বিত করে থাকে। তাই এই সমঝোতামূলক শ্রমকল্যাণের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েই চলেছে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ বিশ্বের দরিদ্রতম একটি দেশ। এদেশের শ্রমিকদের জীবনমানোন্নয়ন
ও সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম যা শ্রমকল্যাণ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। শ্রমকল্যাণের যত উন্নয়ন ঘটানো হবে ততই দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তাই বাংলাদেশে সরকারকে শ্রমকল্যাণ নিশ্চিতকল্পে কাজ করতে হবে।