অথবা, শাস্তি প্রতিরোধাত্মক মতবাদ উল্লেখ কর।
অথবা, শাস্তি প্রতিরোধাত্মক মতবাদ সম্পর্কে তুমি যা জান লিখ ।
অথবা, শাস্তি প্রতিরোধাত্মক মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজে অপরাধের প্রতিবিধানের জন্য শাস্তির উদ্ভব হয়েছে। শাস্তি হলো মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার এক প্রকার উপায়। সমাজে বসবাসকারী মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের নৈতিকতা ভঙ্গ করে এমন সব কর্ম করে যার ফলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে ওঠে। মানুষের এসব কর্মকে অপরাধ বলা হয়। এ অপরাধমূলক কাজ হলো সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ। এ সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবিধান হিসেবে নীতিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শাস্তির আলোচনা হয়ে থাকে। নীতিবিজ্ঞান হলো সমাজে বসবাসকারী ব্যক্তির আচরণের নৈতিক বিচার। কাজেই নৈতিকতা ভঙ্গকারী আচরণকে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে তা নীতিবিজ্ঞান আলোচনা করে থাকে।
প্রতিরোধাত্মক মতবাদ : উপযোগিতার নীতির উপর এ মতবাদ প্রতিষ্ঠিত। অপরাধজনক কাজের প্রতিরোধ করাই হলো এর উদ্দেশ্য। এ মতবাদ অনুসারে অপরাধীকে শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্য হলো অপর ব্যক্তিদের অনুরূপ অপরাধ হতে বিরত করা। যদি কোনো ব্যক্তিকে তার অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া হয় তবে ভবিষ্যতে সে নিজে আর ঐ অপরাধ
করবে না। বরং ব্যক্তিরাও ঐরূপ শাস্তির ভয়ে ঐ রূপ অপরাধজনক কাজ করা হতে বিরত থাকবে। এ মতবাদীরা বলেন, অপরাধীকে এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে তার শাস্তি দেখে অন্য কোনো লোক অনুরূপ অপরাধ করতে সাহস না পায়। এ মতবাদ ভয়ংকর অপরাধের জন্য অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াও সমর্থন করে। কারণ, তা ভয়ংকর অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ডরূপ কঠোর শাস্তি ভোগ করতে দেখলে অপর ব্যক্তিরা তদ্রূপ ভয়ংকর অপরাধ করতে ভয় পাবে। ফলে এ জাতীয় অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে। বিচারকের সুপরিচিত এক অনুশাসন বাক্যে এ মতবাদকে সুন্দরভাবে ব্যক্ত করা
হয়েছে। যথা : “ভেড়া চুরি করার জন্য নয়, যাতে ভেড়া চুরি আর না হয় তার জন্য তোমায় শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।” সুতরাং, এ মতবাদীদের মতে শাস্তি প্রদানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধ নিবারণ করা। কতিপয় ত্রুটির জন্য শাস্তি সম্পৰ্কীয় এ মতবাদটি সার্বজনীন মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নি। এ ত্রুটিগুলো নিম্নরূপ :
প্রথমত, অপরাধী একজন মানুষ, তার উদ্দেশ্য আছে এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আছে। এ সত্ত্বেও অপরের মঙ্গলের জন্য অপরাধীকে উপায় হিসেবে গ্রহণ করে এ মতবাদ মনুষ্যত্বের প্রতি কঠোর আঘাত হেনেছে।
দ্বিতীয়ত, এ মতবাদ অপরাধীর কল্যাণের কথা একেবারেই চিন্তা করে নি। অপরাধীর নিজের কোনো কল্যাণ ব্যতীত কেবল অপরের কল্যাণের জন্য যদি অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয় তবে অপরাধীর প্রতি ঘোরতর অবিচার করা হয়।
তৃতীয়ত, এ মতবাদ অপরাধীকে কেবল কঠোর শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজনই অনুভব করেছে। অপরাধীর অপরাধ এবং শাস্তির মধ্যে যে পরিমাণগত সামঞ্জস্য থাকা উচিত তা সম্বন্ধে কোনো ইঙ্গিত দেয় নি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, অপরাধী যেমন অপরাধ করে তেমন শাস্তিও ভোগ করে। তবে শাস্তির ধরন ভেদে কারো কম বেশি হয়ে থাকে। শাস্তির মূলকথা হচ্ছে আচরণ সংশোধন। এজন্য অপরাধীকে এমনভাবে শাস্তি দিতে হবে যেন সে এমন ধরনের কাজ আর না করে। আর এটাই হচ্ছে প্রতিরোধাত্মক মতবাদের সারকথা।