অথবা, শাস্তির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক তুলে ধর।
অথবা, শাস্তির ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিক ব্যাখ্যা কর।
অথবা, শান্তির সীমাবদ্ধতার স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : অপরাধের পরবর্তী ফলাফল শাস্তি। অপরাধ করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। যে দিন থেকে অপরাধের গোড়াপত্তন হয়েছে সেদিন থেকে সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা তথা অপরাধ প্রশমনের জন্য কিছু নিয়ম নীতি চালু করা হয়েছে। যা অপরাধীকে অপরাধ কার্য থেকে বিরত রাখে। এগুলোকে সাধারণ অর্থে শাস্তি বলে। পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, গ্রিস, রোম, ব্যাবিলন প্রভৃতি সভ্যতায় অপরাধ দমনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ব্যাবিলনের সম্রাট হাম্বুরাবি তার রাজ্য পরিচালনার জন্য ৯টি অনুশাসন চালু করেন। যা আইন ও শাস্তি ব্যবস্থার প্রাথমিক দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেন। ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন শাস্তি ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। আর এ সকল শাস্তি ব্যবস্থা মূলত শাসককুল কোনরূপ ঝামেলা ছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রবর্তন করতেন। এ সকল শাস্তি ব্যবস্থা ছিল নির্মম। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে শাস্তির ধরনও পাল্টাতে থাকে এবং নির্মমতা থেকে সংশোধনমূলক প্রকৃতির দিকে এগিয়ে এসেছে।
শান্তির সীমাবদ্ধতা : প্রতিটা অপরাধের যেমন শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি কোনো শাস্তিই সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়। কারণ, সকল প্রকার শাস্তিরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে অর্থাৎ, শাস্তিগুলো তার ইন্সিত লক্ষ্য অর্জনে পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। আর এক্ষেত্রে দু’দিক থেকে শাস্তির সীমাবদ্ধতা নিরূপণ করা হয়েছে। যথা :
১. ইতিবাচক অর্থে, শাস্তি যে কাজটি করে তাকে বুঝানো হয়।
২. নেতিবাচক অর্থে, শাস্তি কোন কোন কাজ করতে ব্যর্থ হয় তা বুঝানো হয়ে থাকে।
ইতিবাচক দিক :
১. শাস্তি বিবেক সম্পন্ন মানুষকে অপরাধ থেকে বিরত রাখে।
২. শাস্তির বিধান আছে বলেই সমাজে এক ধরনের স্থিতিশীলতা আছে।
৩. শাস্তির কারণেই অপরাধীরা লঘু অপরাধ করে থাকে।
৪. শাস্তির যথাযথ প্রয়োগ অপরাধ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৫. শাস্তি সম্মানহানি করতে পারে বলেই অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।
নেতিবাচক কি :
১. শাস্তির কারণে সব অপরাধীই তার কৃতকর্ম গোপন করে ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়।
২. শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধী সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তার মধ্যে হতাশা ও হীনম্মন্যতা জাগে।
৩. প্রকৃত অপরাধী যদি প্রমাণের অভাবে সজাপ্রাপ্ত না হয় তবে সাময়িক শাস্তি ভোগের পর সে আরও বড় ধরনে অপরাধ করতে পারে।
৪. যদি অপরাধী সাজাপ্রাপ্ত হয় তবে পরবর্তীতে সে আরো প্রতিশোধ প্রবণ হয়ে ওঠে।
৫. শাস্তি সাধারণত সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের ব্যক্তিত্বের সংশোধন আনতে পারে না এবং শাস্তির বিধান থাকা সত্ত্বেও মানুষ অপরাধ করে।
৬. শাস্তি অপরাধীর মধ্যে হিংসাত্মক গুণাবলি জাগিয়ে তোলে।
৭. শাস্তি সামাজিক সংস্কার আনয়নে ব্যর্থ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট করতে পারে।
৮. শাস্তি একজনকে হয়তো বাঁধা দিচ্ছে। একই ধরনের অন্যান্য অপরাধীরা ঐ অপরাধ করেই চলে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, শাস্তি হলো অপরাধের বিপরীত প্রতিক্রিয়া। অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হবে। তবে সব অপরাধের শাস্তি সমান নয়। অপরাধ ভেদে শাস্তি ভিন্ন হয়। কিন্তু শাস্তির সীমাবদ্ধতা আবশ্যক, কেননা কোনো শাস্তিই সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়।