অথবা, শাস্তি কী?
অথবা, শাস্তি বলতে কী বুঝায়?
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজে অপরাধের প্রতিবিধানের জন্য শাস্তির উদ্ভব হয়েছে। শাস্তি হলো মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি উপায়। সমাজে বসবাসকারী মানুষ স্বেচ্ছায় তাদের নৈতিকতা ভঙ্গ করে এমন সব কর্ম করে যার ফলে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে। মানুষের এসব কর্মকে অপরাধ বলা হয়। এ অপরাধমূলক কাজ হলো সমাজ বিরোধী কার্যকলাপ। এ সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবিধান হিসেবে নীতিবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শাস্তির আলোচনা হয়ে থাকে।
শাস্তি : পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায় যে গ্রিস, ব্যাবিলন, রোম প্রভৃতি সভ্যতায় অপরাধ দমনের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ব্যাবিলনের সম্রাট হাম্বুরাবী তাঁর রাজ্য পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি অনুশাসন চালু করেন যা আইন ও শাস্তি হিসেবে প্রচলিত ছিল। ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন অপরাধবিজ্ঞানী, গবেষক ও সমাজতত্ত্ববিদগণ বিভিন্ন সময়ে ও সমাজের প্রেক্ষাপটে শাস্তিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। নিম্নে তাঁদের প্রদত্ত কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
অপরাধবিজ্ঞানী ওয়াল্টার সি. রেকলেস তাঁর ‘Criminal Behaviour’ গ্রন্থে বলেন, “শাস্তি বলতে শুধুমাত্র রাষ্ট্র বা বিচারালয় কর্তৃক ঘোষিত দণ্ডাদেশ বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাকেই বুঝায় না, শাস্তি বলতে কোন সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অপরাধীর বিরুদ্ধে ঘোষিত ক্ষতিপূরণ বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাকেও বুঝায় ।” শাস্তির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কোহেন বলেন, “মানুষের কল্যাণের জন্যই শাস্তি দেয়া হয়। শাস্তির মাধ্যমেই আইনে অন্তর্নিহিত মূল্যের সমর্থন খুঁজে পাওয়া যায়। শাস্তির একটি মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তি আছে। শাস্তি অপরাধীর ব্যক্তিত্বকে অপরের চোখে ছোট করে দেয়। অপরাধী অনুভব করে যে, শাস্তির মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব অপরের কাছে অনেকখানি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাছাড়া নানাভাবে শাস্তি মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করে।” সাধারণ অর্থে, নীতি গর্হিত কোন কাজ বা আইন ভঙ্গের জন্য অপরাধীর উপর কষ্টদায়ক কোন ব্যবস্থা আরোপই হচ্ছে শাস্তি । তবে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী এবং অপরাধবিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে শাস্তির সংজ্ঞা দেয়ার প্রয়াস পেয়েছেন।
আইনের দৃষ্টিতে শাস্তি : আইনের দৃষ্টিতে বলা যায় যে, যখন কোন একটি রাষ্ট্র বা উপজাতি কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন ভঙ্গের কারণে বিশেষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে যা ব্যক্তিটির জন্য বেদনাদায়ক তবে তা হবে শাস্তি।সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, শাস্তির পিছনে রাষ্ট্রের সমর্থন লাগবে। তাই সহজভাবে বলা যায় যে, কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত প্রতিকার বা প্রতিবিধানমূলক ঘোষণাই হচ্ছে শাস্তি। কোন ধরনের ব্যবস্থা গৃহীত হবে তা নির্ভর কোন দেশের প্রথা বা আইনের উপর।
সামাজিক অর্থে শাস্তি : সামাজিক অর্থে বলা যায় যে, সমাজ বিরোধী বা আইন ভঙ্গকারী শাস্তি প্রাপ্তির মাধ্যমে কষ্ট ভোগ করা উচিত এবং ঐ ধরনের শাস্তি প্রদানে সমাজের যে ক্ষমতা রয়েছে তা ন্যায়সঙ্গত।
উপসংহার : অতএব শাস্তি বলতে বুঝায় শুধুমাত্র রাষ্ট্র বা বিচারালয় কর্তৃক ঘোষিত দণ্ডাদেশ বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাই নয়, শাস্তি বলতে কোন সুসংবদ্ধ বা সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অপরাধীর বিরুদ্ধে ঘোষিত ক্ষতিপূরণ বা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাকেও বুঝায়। অপরাধের জন্য বিচারে দোষী ব্যক্তির উপর রাষ্ট্র বা আদালত কর্তৃক আরোপিত দণ্ড বা
সাজাই হলো শাস্তি ।