যোগাযোগের নীতিমালা উল্লেখ কর।

অথবা, যোগাযোগের নীতিমালা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, যোগাযোগের নীতিমালা তুলে ধর।
অথবা, যোগাযোগের নীতিমালাসমূহ লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজকর্ম অনুশীলনে পেশাদার সমাজকর্মীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। এসব কৌশলের মধ্যে অন্যতম হলো যোগাযোগ কৌশল। আর এ যোগাযোগকে ফলপ্রসূ করার জন্য কতিপয় নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়।
যোগাযোগের নীতিমালা : নিম্নে যোগাযোগের নীতিমালা উল্লেখ করা হলো :
১. সম্পূর্ণতা : যোগাযোগের অন্যতম লক্ষ্য হলো সম্পূর্ণ নীতিমালা মেনে চলা। এক্ষেত্রে যোগাযোগকারীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে পরিপূর্ণভাবে যোগাযোগ গ্রহীতার নিকট পাঠাতে হবে ।
২. স্পষ্টতা : যোগাযোগের আর একটি নীতিমালা হলো ভাষার স্পষ্টতা, যোগাযোগের বিষয় সহজ ও স্পষ্ট হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৩. মনোযোগ : যোগাযোগের ক্ষেত্রে মনোযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পূর্ণ মনোযোগ না থাকলে যোগাযোগ সফল হয় না। এক্ষেত্রে যোগাযোগকারী ও যোগাযোগ গ্রহীতা উভয়ই একে অপরের বক্তব্যের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে।
৪. সংহতি : যোগাযোগের ক্ষেত্রে সংহতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি অবশ্যই সাংগঠনিক লক্ষ্যের বিকল্প হতে হবে। যোগাযোগকারীর ভাষা ও তার মনোভাবের মধ্যে মিল থাকতে হবে।
৫. ঐক্য : ঐক্য যোগাযোগের একটি অন্যতম নীতি। ঐক্য বলতে এক্ষেত্রে যোগাযোগের ভাষা ও বক্তব্যের মধ্যে সাদৃশ্য থাকাকে বুঝায় । ঐক্য যোগাযোগকে স্বার্থক করে তোলে ।
৬. সহজতা : যোগাযোগকারীকে সহজভাবে বক্তব্য পেশ করার দক্ষতা থাকতে হবে। এ নীতি অনুসরণের মাধ্যমে কার্যকর যোগাযোগ সম্ভব হয়।
৭. গতিশীলতা : যোগাযোগের বিশেষ নীতিমালা হলো গতিশীলতা। গতিশীলতার কারণে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে টেলিফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট প্রভৃতি অভাবনীয় সফলতা এনে দিয়েছে।
৮. পারস্পরিক বিশ্বাস : যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগাযোগকারী ও যোগাযোগ গ্রহীতার মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসাবে বিবেচিত। পারস্পরিক বিশ্বাসের বন্ধন যোগাযোগকে ফলপ্রসূ করে তোলে ।
৯. সঙ্গতি : যোগাযোগকারী যোগাযোগ গ্রহীতার নিকট যে নির্দেশ পাঠাবেন তা অবশ্যই সংগঠনের লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে । অসঙ্গতিপূর্ণ থাকলে তা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে ।
১০. কটন বা প্রেরণ : যোগাযোগের ক্ষেত্রে বণ্টন বা প্রেরণ অন্যতম নীতি হিসেবে বিবেচিত। এক্ষেত্রে বার্তা সম্পর্কে প্রেরকের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এ নীতি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়।
১১. অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ : যোগাযোগ শুধু আনুষ্ঠানিক হলে চলবে না। এর পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এতে করে যোগাযোগের সফলতা নিশ্চিত হওয়া যায় ।
১২. তথ্য পর্যালোচনা : যোগাযোগের একটি তাৎপর্যপূর্ণ নীতি হলো তথ্য পর্যালোচনা। যোগাযোগ গ্রহীতার নিকট তথ্য প্রেরণের পর তা ঠিকভাবে পৌছল কিনা তারও খোঁজ খবর নিতে হবে।
১৩. পর্যালোচনা : যোগাযোগের একটি তাৎপর্যপূর্ণ নীতি হলো পর্যালোচনা। যোগাযোগ গ্রহীতার নিকট তথ্য প্রেরণের পর তা ঠিকভাবে পৌঁছল কিনা তা পর্যালোচনা করতে হবে।
১৪. পরস্পর নির্ভরতা : যোগাযোগকারী ও যোগাযোগ গ্রহীতার মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা থাকতে হবে। পরিপূর্ণ নির্ভরতা থাকলে যোগাযোগ ফলপ্রসূ হয় ।
১৫. আগ্রহ ও গ্রহণ : আগ্রহ ও গ্রহণ বলতে এখানে যোগাযোগ গ্রহীতার বিষয়ের প্রতি আগ্রহ এবং একে গ্রহণ করার মানসিকতাকে বুঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ গ্রহীতার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অত্যাবশ্যক ।
১৬. পদ্ধতি ও সময়োপযোগিতা : যোগাযোগের ক্ষেত্রে এর বিষয়বস্তু পূর্বেই ঠিক করতে হবে। এছাড়া যোগাযোগ গ্রহীতার নিকট প্রেরিত বার্তাটি অবশ্যই সময়োপযোগী হতে হবে। এর উপর যোগাযোগের স্বার্থকতা নির্ভর করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত নীতিসমূহ অনুসরণের মাধ্যমে কার্যকর যোগাযোগ সম্ভব হয়। এসব নীতির কোনোটির অনুপস্থিতি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সফলতা আনতে ব্যর্থ হয়। ফলে যোগাযোগে সফলতা অর্জনে সমস্যা হয় । তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে এসব নীতি অনুসরণ করা উচিত।