মোডে পাঁচ কুড়া আমার ভুঁই, হের দুই কুড়াই সড়কে খাইলে আমি খামু কী?”- কে এবং কেন এমন বলেছে?

উত্তর : প্রশ্নধৃত অংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্পের গহুরালির। গহুরালির সামান্য ভূসম্পত্তির প্রায় অর্ধেক অংশই নতুন রাস্তার জন্য দান করতে বলা হলে বিপন্ন গহুরালি এ কথাগুলো জোনাবালি হাওলাদারকে বলেছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মাউলতলা ছিল এক বিচ্ছিন্ন গ্রাম। কোন নগর কিংবা নাগরিক সভ্যতার সাথে তার সংযোগ ছিল না। বাইরের জগতের কোন সংবাদ এখানে এসে পৌঁছাত না। ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, দিল্লির রাজাপাটের উত্থানপতনের কোন প্রতিক্রিয়া এখানে হতো না। এমনকি ভারতবর্ষের সভ্যতা সংস্কৃতির ভিত নড়িয়ে দেয়া ইংরেজ সভ্যতাও দীর্ঘদিন পর্যন্ত এখানে কোন আলোড়ন জাগাতে পারেনি। অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল থেকে। চল্লিশ বছর আগে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে। যাওয়া জোনাবালি হাওলাদার এই সময়ে গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামবাসীদর সে শহরের আলো ঝলমল জীবনের কথা শোনায়। নিজের সাফল্যের কথা সবিস্তারে বর্ণনা করে। ফলে গ্রামবাসীদের মনে ক্রমে ক্রমে দূরের অদেখা শহর ও শহুরে জীবন সম্পর্কে এক ধরনের
মোহ জন্মাতে থাকে । গ্রামের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য জোনাবালি শহরের সাথে সংযোগ সাধনকারী একটি নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজে উদ্যোগী হয়ে উঠে। জোনাবালির এ উদ্যোগে গ্রামের অপেক্ষাকৃত বিত্তবানরা সোৎসাহে সাড়া দেয়। কেননা গ্রামোন্নয়নের নামে এটি ছিল প্রকৃতপক্ষে তাদের নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় গহুরালির মতো দরিদ্র কৃষকদের নিয়ে। গহুরালির সবশুদ্ধ জমির পরিমাণ মাত্র পাঁচ কুড়া। এর মধ্যে দুই কুড়া জমিই পরিকল্পিত নতুন রাস্তার জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে। গহুরালি যদি রাস্তার জন্য তার পাঁচ কুড়া জমি থেকে দুই কুড়াই দান করে দেয় তাহলে তার প্রচণ্ড আর্থিক অনটন দেখা দেবে। কেননা ঐ জমিটুকুর উৎপাদিত ফসল থেকেই আসে তার সারাবছরের খাওয়াপরার খরচ। তাই প্রথম পর্যায়ে সে রাস্তার জন্য জমি দিতে রাজি হয় না। জোনাবালির কাছে সে বিনীত প্রশ্ন উত্থাপন করে তার পাঁচ কুড়া জমির দুই কুড়াই যদি রাস্তায় খেয়ে নেয় তাহলে সে নিজে খাবে কী? যেহেতু জমিই ছিল গহুরালির বেঁচে থাকার একমাত্র আশ্রয়, তাই জমি দানের প্রশ্নটি তার কাছে জীবনমরণের প্রশ্নের মতই জরুরি হয়ে দেখা দেয়।