মারমা সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য লিখ।

মারমা সম্প্রদায একটি পুরাতাত্ত্বিক হিন্দু ধর্মবিশেষ যা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত হয়েছে।


মারমা সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য:

ভৌগোলিক অবস্থান:

  • মারমা সম্প্রদায় বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলা – রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়িতে বসবাস করে।
  • মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলেও তাদের বসবাস রয়েছে।

জনসংখ্যা:

  • বাংলাদেশে মারমা সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ।
  • চাকমা আদিবাসীর পর এরা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী।

ভাষা:

  • মারমা ভাষা তিব্বতো-বার্মি ভাষা পরিবারের বর্মী শাখার অন্তর্গত।
  • মারমা ভাষার নিজস্ব লিপি ‘ম্রাইমাজা’ রয়েছে।

ধর্ম:

  • বেশিরভাগ মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।
  • কিছু মারমা খ্রিস্টান এবং হিন্দু ধর্মও পালন করে।

পোশাক:

  • মারমা পুরুষরা ‘দেয়াহ্’ (ধুতি) এবং ‘বারিস্তা’ (জ্যাকেট) পরে।
  • মারমা মহিলারা ‘থবিং’ (লম্বা স্কার্ট) এবং ‘বেদাই আঙগি’ (ব্লাউজ) পরে।
  • মারমা পুরুষরা মাথায় ‘খবং’ (পাগড়ি) এবং মহিলারা ‘রাংকাই’ (চুড়ি) পরে।

খাদ্য:

  • মারমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, মাছ, মাংস এবং শাকসবজি।
  • ‘ওয়াংজা’ (মাছের তরকারি), ‘মুরং থা’ (মাংসের তরকারি) এবং ‘খাউয়া’ (ভাত) তাদের জনপ্রিয় খাবার।

বাসস্থান:

  • মারমারা বাড়িঘর ‘মাচাং’ নামে পরিচিত।
  • মাচাং বাঁশ, কাঠ এবং ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয়।
  • মাচাং সাধারণত উঁচুতে তৈরি করা হয়।

সংস্কৃতি:

  • মারমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে।
  • ‘ম্রাং’ (গান), ‘থ্যাং’ (নৃত্য) এবং ‘ম্রাং থ্যাং’ (গান ও নৃত্য) তাদের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক উপাদান।
  • ‘ম্রাং ম্রাং’ (বৌদ্ধ ধর্মীয় গান) তাদের ধর্মীয় রীতিনীতির অংশ।

উৎসব:

  • ‘ওয়াংলা’ (নতুন বছর), ‘কৌংগ্রাই’ (বুদ্ধ পূর্ণিমা) এবং ‘থ্যাংখা’ (পূর্ণিমা) তাদের প্রধান উৎসব।
  • ‘ওয়াংলা’ উৎসব তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।

সামাজিক রীতিনীতি:

  • মারমা সমাজে পারিবারিক বন্ধন খুবই শক্তিশালী।
  • ‘থামোহাডা’ নামে পরিচিত উত্তরাধিকার নীতি অনুসরণ করে।
  • বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত।

অর্থনীতি:

  • কৃষি মারমাদের প্রধান জীবিকা।
  • ধান, ভুট্টা, পাট এবং সবজি চাষ করে।
  • কিছু মারমা জীবিকা নির্বাহের জন্য জীবন্ত পশুপাখি বিক্রি করে।

এই সম্প্রদায়ের কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নলিখিত:

  1. প্রাচীনতা এবং পুরাতাত্ত্বিক মৌল্যবান: মারমা সম্প্রদাযের অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, মারমা সম্প্রদাযের উৎপত্তি অনেক পুরাতাত্ত্বিক হিন্দু ধর্মবিশেষের সাথে সম্পর্কিত হয়।
  2. তন্ত্রমূলক উপাসনা: মারমা সম্প্রদাযে তন্ত্রমূলক উপাসনা এবং মন্ত্র বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রযোজ্য মন্ত্রগুলি ব্যবহার করে উপাসকরা মারমাকে উপাসে এবং আত্মজ্ঞানের দিকে অগ্রসর হতে চেষ্টা করে।
  3. বিদ্যাতন্ত্র এবং যন্ত্রবিদ্যা: মারমা সম্প্রদাযে বিদ্যাতন্ত্র এবং যন্ত্রবিদ্যা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মারমার অনুযায়ী, এই বিদ্যা ও যন্ত্রবিদ্যার মাধ্যমে মনোনিগ্রহের এবং আধ্যাত্মিক অগ্রসর হতে হয়।
  4. শক্তি এবং শক্তিরূপের উপাসনা: মারমা সম্প্রদাযে মা মারমা বা শক্তিরূপের উপাসনা গুরুত্বপূর্ণ। এই মা মারমা কে মাতৃকে এবং শক্তিরূপে উপাসনা করা হয়।
  5. আত্মসাক্ষাত্কার এবং আত্মজ্ঞান: মারমা সম্প্রদায়ে আত্মসাক্ষাত্কার এবং আত্মজ্ঞানের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। উপাসকরা ধার্মিক অনুভূতি এবং আত্মজ্ঞানের মাধ্যমে আত্মা বা ব্রহ্ম সাক্ষাত্কার করতে চেষ্টা করে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি মারমা সম্প্রদায়কে একটি অদ্ভুত এবং অদ্ভুত ধার্মিক প্রচলনে পরিণত করে। মারমা সম্প্রদাযের অনুযায়ী ধার্মিক অনুভূতি, আত্মজ্ঞান এবং ব্রহ্ম সাক্ষাত্কার একটি ব্যক্তিকে জীবনের উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে।