মারমাদের বংশ পরিচয় সম্পর্কে লিখ

মারমাদের বংশ পরিচয়:

মারমারা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা – বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙামাটিতে বসবাসকারী একটি প্রধান আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাদের সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষেরও বেশি।

উৎপত্তি:

মারমাদের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত রয়েছে।

  • ম্রাইমা বংশোদ্ভূত:
    • অনেকে মনে করেন, মারমারা ‘ম্রাইমা’ নামক একটি প্রাচীন জাতি থেকে উদ্ভূত।
    • ‘ম্রাইমা’ নামটি ‘ম্রানমা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘পাহাড়ি জাতি’।
    • ‘ম্রাইমা’ রা পরবর্তীতে ‘মারমা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
  • তিব্বতীয় বংশোদ্ভূত:
    • কতিপয় ঐতিহাসিক মনে করেন, মারমারা তিব্বতীয় বংশোদ্ভূত।
    • তাদের মতে, তিব্বত থেকে বহিষ্কৃত ‘ম্রো’ জাতি ‘মারমা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
  • মগ বংশোদ্ভূত:
    • কিছু পণ্ডিত মনে করেন, মারমারা ‘মগ’ জাতির বংশধর।
    • ‘মগ’ রা দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে আসছে।

ভাষা:

মারমাদের নিজস্ব ভাষা ‘মারমা ভাষা’। এটি ‘চীনা-তিব্বতীয় ভাষা পরিবারের’ ‘বর্মী-লোলো শাখার’ অন্তর্গত।

ধর্ম:

মারমাদের অধিকাংশই ‘থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী’। তবে, কিছু সংখ্যালঘু ‘হিন্দু ধর্ম’ ও ‘খ্রিস্টধর্ম’ অনুসরণ করে।

সংস্কৃতি:

মারমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি রয়েছে। তাদের নিজস্ব পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, রীতিনীতি, গান, নাচ, উৎসব ইত্যাদি রয়েছে।

পেশা:

মারমাদের প্রধান পেশা কৃষি। তারা পাহাড়ি ঢালে ‘ঝুম চাষ’ করে। এছাড়াও, তারা মৎস্যজীবী, শিকারী, এবং কারিগর হিসেবে কাজ করে।

সামাজিক সংগঠন:

মারমাদের সমাজ ‘বংশ’ ও ‘পারিবারিক’ নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব:

  • কাওয়ারী মং থং:
    • তিনি মারমাদের একজন খ্যাতনামা লেখক ও কবি।
    • ‘মারমা ভাষার’ প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন।
  • থানচংয়া:
    • তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা মারমা সর্দার।
    • ব্রিটিশ শাসনামলে তিনি মারমাদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করেছিলেন।

বর্তমান অবস্থা:

মারমারা বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন।

  • ভূমি অধিকার:
    • তাদের বসবাসের জমি দখলের শিকার হচ্ছে।