উৎস : আলোচ্য অংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্পের অন্তর্ভুক্ত।
প্রসঙ্গ : শহরের সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য জোনাবালি হাওলাদার গ্রামবাসীদের কাছে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছিল, প্রশ্নধৃত অংশে রয়েছে তারই পরিচয়।
বিশ্লেষণ : মাউলতলা দক্ষিণ বাংলার এক নিভৃত জনপদ। শত শত বছর ধরে এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত আপন অস্তিত্বের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে এই গ্রামের জীবনধারা নিজস্ব ছন্দে বয়ে চলছে। বাইরের কোন সভ্যতা, সংস্কৃতির সাথে এর যোগাযোগ নেই। আর এই যোগাযোগ শূন্যতার কারণে এই গ্রামের কোথাও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এর নিস্তরঙ্গ জীবনধারায় না আছে কোন বৈচিত্র্য, না আছে সমৃদ্ধির কোন দীপ্তি। গ্রামের এক সাহসী ও ভাগ্যান্বেষী জোনাবালি হাওলাদার এই জীবনবৃত্ত থেকে বেরিয়ে পড়েছিল আপন ভাগ্যের পরিবর্তনে। গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়ে সে তার জীবনে সফলতা লাভ করেছে। মালিক হয়েছে প্রচুর বিত্তবৈভবের। চল্লিশ বছর পর আবার সে তার পুরনো গ্রামে ফিরে আসে। শহর ফেরত এই সফলকাম মানুষটি গ্রামে ফিরে তার গ্রামবাসীদের কাছে শহুরে সভ্যতা ও জীবন পদ্ধতির বর্ণাঢ্য পরিচয় তুলে ধরতে লাগল। দীন-দরিদ্র মাউলতলাবাসীদের সে বুঝাল যে, জীবনের উন্নতি সাধন করতে হলে শহরের সাথে যোগাযোগ প্রয়োজন। আর এ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য সে একটা নতুন সড়ক নির্মাণের কাজে উদ্যোগী হয়ে উঠল। এই সড়ককে সে এক নতুন জীবনের দুয়ার বলে অভিহিত করে এ কাজের সাথে সংযুক্ত হবার জন্য গ্রামবাসীদের উদ্দীপিত করে তুলতে লাগল। যুগের পর যুগ ধরে মউলতলাবাসীরা যে জীবনযাপন করে আসছে, সে জীবন কোনদিক থেকেই যে সফল কিংবা আনন্দময় নয়, একথা জোনাবালি গ্রামবাসীদের নানাভাবে বুঝিয়ে বলল। মানুষের মত মানুষ হয়ে বাঁচতে হলে, আনন্দ ঝলমল জীবনের অংশভাগী হতে হলে গ্রামবাসীদের শহরের সাথে সংযোগ রাখতে হবে, জোনাবালি তার যুক্তিতর্ক ও বক্তব্য দিয়ে
মাউলতলাবাসীদের এ কথা বিশ্বাস করাল। যে শহর এতদিন ছিল তাদের কাছে অচেনা ও অপ্রয়োজনীয়, আগামী উন্নত জীবনের জন্য তা হয়ে উঠল তাদের কাছে অপরিহার্য।
মন্তব্য : বর্তমানে নগরই সকল কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। তাই গ্রামোন্নয়নের জন্য শহরের সাথে যোগাযোগ প্রয়োজন।