‘ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি’ কী? আলোচনা কর ।

অথবা, সমাজকর্মের একটি মূল্যবোধ হিসেবে “ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি” নীতি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমাজকর্মের মূল্যবোধ হিসেবে ‘ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি’ ধারণাটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
প্রতিটি পেশার ন্যায় সমাজকর্ম পেশারও কতকগুলো মূল্যবোধ রয়েছে।সমাজকর্মীদের এই মূল্যবোধ অনুসরণ করে কাজ করতে হয়। মূল্যবোধ সমাজকর্ম অনুশীলনের Guideline বা Principle হিসেবে কাজ করে।
সমাজকর্মে আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নীতি ও মূল্যবোধ : সমাজকর্ম অনুশীলন সমাজকর্মীগণ কতকগুলো সাধারণ মূল্যবোধ অনুসরণ করেন।সমাজকর্মের এ সাধারণ মূল্যবোধগুলোর একটি হলো ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি।নিম্নে এ নীতি নিয়ে আলোচনা করা হলো :
ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি (Digaity of mans) : সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও মূল্যবোধ হলো ‘ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি’ প্রদান। মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তার আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানই এর মূল কথা।সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানুষ। আর মানুষ হিসেবে সমাজের প্রত্যেকেই পৃথক মর্যাদা ও সত্তার অধিকারী।সমাজকর্ম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, পেশা, লিঙ্গ নির্বিষে সকলের বিশেষ মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতিদানে বিশ্বাসী।এভাবে সকল মানুষের বিশেষ মর্যাদার স্বীকৃতিদানের বিশ্বাস হলো ‘ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি’।সমাজকর্ম বিশ্বাস করে নারী-পুরুষ, হিন্দু-খ্রিস্টান-মুসলিম, জাতি-উপজাতি, ধনী-গরিব, শ্রমজীবী-শিল্পপতি সকলেরই
মানুষ হিসেবে মর্যাদা রয়েছে। মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই রয়েছে বাঁচার অধিকার ও কল্যাণ লাভের অধিকার। সমাজের সার্বিক কল্যাণের জন্য সকলের মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে সকলের উন্নয়ন সাধন করা প্রয়োজন। স্থান-কাল-পাত্র নির্বিশেষে যেহেতু প্রত্যেক মানুষই ‘মানুষ’ হিসেবে বিবেচিত; ‘জীব’ হিসেবে নয় তাই কারোর মর্যাদাই অস্বীকার করা যায় না।প্রত্যেকেরই রয়েছে ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ আর আনন্দ নিরানন্দের অনুভূতি, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও সুখানুভবে সবাই সমান; সবারই রয়েছে প্রেম-প্রীতি আর ভালোবাসার সহজাত ও শাশ্বত অনুভূতি।তাই প্রত্যেকেরই মানুষ হিসেবে বাস করার পূর্ণ মর্যাদা, সুযোগ সুবিধা ও অধিকার থাকা প্রয়োজন।এ অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে সমাজকর্মে যে মূল্যবোধের জন্ম হয়েছে তা হলো ‘ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি’ ইসলামের বাণী ‘মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত’ আর চণ্ডীদাসের বক্তব্য ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ এ মূল্যবোধেরই নামান্তর। মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে বিবেচনা করে তার সুখে-দুঃখে পাশে দাড়ানোর মাধ্যমে তার কল্যাণসাধনের মধ্যেই এ মূল্যবোধের বাস্তব রূপায়ণ সম্ভব। সমাজকর্ম পৃথিবীর সকল মানুষকেই বিশেষ বিশেষ মর্যাদা ও মূল্যে আসীন করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সকল মানুষের মর্যাদার স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে সমাজকর্ম সকলের কল্যাণে সমগুরুত্ব
আরোপ করে । সমাজের সুষম উন্নয়ন ও নান্দনিক সমাজ গঠনে তাই এ নীতিমালা ও মূল্যবোধের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।