বুদ্ধিজীবী হত্যা সম্পর্কে কী জান?

অথবা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয় কেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি সৃষ্টি এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের অবদান ছিল অপরিসীম। পাকিস্তানের বৈষম্য, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে বুদ্ধিজীবী সমাজ। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বাঙালিকে স্থায়ীভাবে পরাধীন রেখে শোষণ করা। নিচে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যা সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো।
বুদ্ধিজীবী হত্যা : পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শক্তি একটি জাতির সংস্কৃতি ও বুদ্ধিসত্তাকে উৎখাত করে নিজেদের শোষণ ও শাসন চিরস্থায়ী করার জন্য এ ঘৃণ্য কাজ শুরু করে। সারাদেশে বুদ্ধিজীবী অভিযানের নীল নকশা ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুযায়ী একযোগে গণহত্যার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযানকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব ছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত। এ সময় গণহত্যার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রকৌশলী, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও রাজনীতিবিদদের হত্যা করা হয় । দ্বিতীয় পর্ব চলে মে-নভেম্বর মাস পর্যন্ত। এ সময় গোপনে পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকারদের সহযোগিতায় বুদ্ধিজীবী নিধন চলে । তৃতীয় পর্ব ছিল ১০ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত। এ সময় পাকবাহিনী রাজাকার ও আল- বদর বাহিনীর সহযোগিতায় ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও দ্রুত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন রণাঙ্গনে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাঙালি জাতিকে স্থায়ীভারে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করতে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবী হত্যা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে এবং বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে একটি দুর্বল দেশে পরিণত করার জন্যই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে তাঁরা আরো অবদান রাখতে পারতেন।