অথবা, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
অথবা, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লিখ।
অথবা, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট উল্লেখ কর।
উত্তর ভূমিকা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বব্যবস্থার অন্যতম ধারণা হলো বিশ্বায়ন (Globalization)। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বায়নের এ ধারণা একবিংশ শতাব্দীর ধারণার সাথে অনেক ক্ষেত্রে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিশ্বায়নের প্রয়োজনীয়তা অনেকে উপলব্ধি করেছিলেন। কিন্তু সমকালীন বিশ্বায়ন বিরোধী জোট খুব তৎপর থাকায় তা তেমন ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি। ১৯৯০ এর দশকে এসে বিশ্বায়ন বিরোধী জোট তাসের ঘরের মত ভেঙে গেলে বিশ্বায়নের প্রবক্তাদের তেজ বেড়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে আজ বিশ্বায়নের এ বিস্তৃতি বা ব্যাপকতা লাভ।
বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপট : বিশ্বায়ন (Globalization) নতুন কোনো ধারণা নয়। বিশ্ব সমাজব্যবস্থায় বিশ্বায়ন এর প্রভাব বা সাম্রাজ্যবাদীদের প্রভাব অতীতেও ছিল। তবে অতীতে বিশ্বায়ন এর যে প্রভাব তা একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বায়নের বিপরীত অবস্থা ছিল। প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর যুগেও সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যায়। এ প্রতিযোগিতা থেকে সংঘটিত হয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর ঠাণ্ডা লড়াই বিশ্বায়নের ভিত্তি রচনা করেছিল। কিন্তু এ কয়েক দশকে তেমন (বিশ্বায়ন ধারণা) বিস্তার লাভ করতে পারেনি। বিশ্বায়নের ধারণা সম্পর্কে আমরা যদি একটু পিছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাব, সুদূর অতীতে আফ্রিকা থেকে যখন মানবজাতির যাত্রা শুরু হয় তারপর থেকে তারা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে । তাদের পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া থেকে সৃষ্টি হয়েছে অনেক সমাজের। এ সমাজগুলোর মধ্যে লক্ষ করা যায় দাস সমাজ, সামন্ত সমাজ, পুঁজিবাদী সমাজ, সমাজতান্ত্রিক সমাজ ইত্যাদি । বিশ্বায়নের আলোচনায় যদি আমরা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের অতীত পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাব- ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি প্রায় দুশত বছর ভারতবর্ষকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছিল। বহু ত্যাগ তিতিক্ষার পর এ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি বাধ্য হন ১৯৪৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসনের লেজ গুটিয়ে নিতে। ১৯৪৭ সালের পরবর্তীতে দেখা যায়
বাংলার জনসাধারণ প্রায় ২৫ বছর ইংরেজ নব্য ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা শোষিত হয়। তবে কোনোটাই বাংলার জাতীয়তাবাদী চেতনার কাছে টিকতে পারেনি। তাই বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার আগ্রাসনমূলক শক্তি বিশ্বায়ন কতদিন স্থায়ী হবে। তা বিবেচ্য বিষয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়ন মূলত একট সর্বব্যাপী ও সার্বক্ষণিক চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসারের ফলে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষই একটি একীভূত বিশ্বব্যবস্থায় মিলিত হচ্ছে, যা বিশ্বায়নের ধারণাকে আরো জোরালো করে তুলেছে।