বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ কী? আলোচনা কর।

বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ কী? আলোচনা কর।
অথবা, কী কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে থাকে? আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বিবাহ বিচ্ছেদের কারণগুলো লিখ।
অথবা, বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ সমস্যা ক্রমেই চরম রূপ ধারণ করছে। পরিবারের রক্তের বন্ধন যদি শক্ত বা মজবুত থাকে এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি সে বন্ধনকে দৃঢ় রাখে তাহলে বিবাহবিচ্ছেদ ক্রমই
দেখা যায় । বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ : বাংলাদেশের সমাজ পরিবেশে বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণ জড়িত হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটায়। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো নিম্নরূপ :
১. অর্থনৈতিক কারণ : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য সচরাচর দায়ী কারণগুলো হলো নিম্নরূপ :
১. স্বামীর বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানের অভাব।
২. স্বামীর সীমিত আয়ে পারিবারিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক টানাপোড়ান ও অপব্যয়।
৩. স্ত্রীর অধিক স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসবহুল জীবনযাপনের মোহ।
৪. স্বামী-স্ত্রীর পক্ষ থেকে অর্থলোভের মোহ।
৫. স্ত্রীর আয় ও অর্থ উপার্জনের উপর স্বামীর কর্তৃত্ব খাটানোর প্রবণতা ও স্ত্রীর নির্ভরতা। অর্থনৈতিক কারণ নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলোতে বেশি কাজ করে। তাতে কর্মসংস্থানের সাথে বিবাহবিচ্ছেদের একটা সম্পর্ক কোনো না কোনো গবেষকের নজরে পড়েছে। অনেক সময় আবার বেকার বরের সংসারে স্ত্রী আর্থিক অনিশ্চয়তা ও মা-বাপসহ আত্মীয়স্বজনের প্ররোচনায় স্বামীকে স্বেচ্ছায় ত্যাগ করে।
২. শারীরিক কারণ : স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যেসব শারীরিক কারণ বিবাহবিচ্ছেদের পিছনে কাজ করে তা হলো :
ক. যৌন সম্পর্ক স্থাপন, রক্ষা ও সন্তুষ্টিতে স্বামী-স্ত্রীর কোনো রকম ঘাটতি বা অক্ষমতা।
খ. স্বামী ও স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতা, দীর্ঘমেয়াদি রোগব্যাধি ও হঠাৎ পঙ্গুত্ব।
গ. স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য।
৩. মানসিক কারণ : বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মানসিক কারণই মুখ্যত দায়ী। এক্ষেত্রে কারণগুলো নিম্নরূপ :
ক. বর কনের মানসিক অপরিপকৃতা, সামাজিক মর্যাদা ও শিক্ষা ইত্যাদিকে বিবেচনায় না এনে ছেলেমেয়েরা আবেগের বশবর্তী হয়ে বাপ-মা অর্থের মাপকাঠিতে পাত্র নির্বাচন করে বিবাহ দিলে তাতে স্বামী স্ত্রীর
পারস্পরিক সমঝোতার অভাব দেখা দেয়।
খ. স্বামী-স্ত্রীর স্নেহ ভালোবাসার দুর্বল ভিত্তি।
গ. স্বামী-স্ত্রীর জীবনাচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির তারতম্য।
ঘ. স্বামী-স্ত্রী উভয়ই কর্মজীবী হলে সন্তান লালন-পালন জনিত সমস্যায় পারস্পরিক দোষারোপ ।
ঙ. স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক প্রত্যাশার অসন্তুষ্টি।
চ. নারী নির্যাতন।
ছ. যৌতুকের দাবি ও প্রতিশ্রুত যৌতুক প্রদানে অক্ষমতা।
জ. স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে মানসিক উদ্বেগ, উত্তেজনা ও হতাশা।
ঝ. পারস্পরিক স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধাবোধের অভাব।
ঞ. স্বামী বা স্ত্রীর সংসার পরিবেশ মানিয়ে চলার অপারগতা।
ট. স্বামী বা স্ত্রীর চারিত্রিক স্খলন ও নেশাগ্রস্ত এবং স্বামী অন্য মেয়ের প্রতি আসক্তি ও স্ত্রী অন্য পুরুষের প্রতি
আকর্ষণ ।
ঠ.ব্যক্তিত্বের বৈপরিত্যের পারিবারিক দ্বন্দ্ব সংঘাত।
ড. কোনো না কোনো পক্ষের আনুগত্যের অভাব।৪. সামাজিক কারণ : বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সামাজিক কারণগুলো হলো নিম্নরূপ ।
১. দারিদ্র্য।
erst
২. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পারিবারিক আয় ব্যয়ে অসামঞ্জস্যতা।
৩.বিয়ের পরও মেয়েদের বাপের বাড়ির সাথে সম্পর্ক রাখার স্বভাবজাত প্রবণতাকে স্বামী পক্ষের আত্মীয় স্বজনের
স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ না করা এবং স্বামী যথাযথ ভূমিকা পালনে অপারগতা ।
স্বামী স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত নতুন বিবাহ করা।
৪. স্বামী পরনারী এবং স্ত্রী পরপুরুষের সাথে সংস্রব ও মেলামেশা।
৬. স্বামী-স্ত্রী অন্যের প্রভাবে প্রভান্বিত হয়ে ভূমিকা পালন।
৭.অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ।
৮. পাশ্চাত্যে ব্যক্তিবাদী ও বৈষয়িক ধ্যানধারণা ও জীবনাচরণে অভ্যস্ত হয়ে দুর্বল সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।
৯. সামাজিক প্রতিষ্ঠানাদির কার্যকারিতা লোপ, দ্রুত মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নৈতিকতার অবনতি।
উপসংহার : উপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক, মানসিক অবস্থা, বিচ্ছেদের জন্য দায়ী হলেও তা প্রতিরোধের ব্যাপারটা মূলত প্রত্যক্ষভাবে মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার উপর নির্ভর করে।
বিবাহ