অথবা, বাংলাদেশে প্রচলিত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশে প্রচলিত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা, বাংলাদেশে প্রচলিত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। ধর্মীয় অনুশাসন, প্রচলিত প্রথা, সরকারি আইন, সামাজিক অভ্যুত্থান ইত্যাদি বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের এবং পার্শ্ববর্তী এই উপমহাদেশের অঞ্চলসমূহে যে ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা যুগ যুগের প্রথা, ধর্মীয় রীতিনীতি ও আইনের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে তা মোটামুটি নিম্নোক্ত কয়েক রকমের।
১. দেওয়ানি ব্যবস্থা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের শাসন ভার গ্রহণ করার পর ১৭৬৫ সালে এ দেওয়ানি ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা চালু হয়। দেওয়ান ছিলেন জমির মালিক যিনি প্রজাদের নিকট থেকে খাজনা আদায় করে একাংশ কোম্পানিকে দিতেন। এ ব্যবস্থা ১৭৯৩ পর্যন্ত চালু ছিল।
২. জমিদারি ব্যবস্থা : জমিদারি ব্যবস্থায় জমিদার হচ্ছেন জমির মালিক, যিনি চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে রাজস্ব দেন এবং অধীনস্থ প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেন। এ জমিদারকে সরকার ও প্রকৃত কৃষকের মধ্যে একজন মধ্যস্বত্বভোগী বলা যায়। এ ব্যবস্থাতে প্রকৃত কৃষক জমির মালিক নন।
৩. রায়তওয়ারি ব্যবস্থা : এ ব্যবস্থাতে কৃষকই জমির মালিক হন। অর্থাৎ কৃষক সরাসরি সরকারের রায়ত বা প্রজা হিসেবে খাজনা দেন এবং জমি বিক্রয় করতে পারেন। এ ব্যবস্থার অধীনে প্রায় ২০ থেকে ৩০ বছর পর পর জমি জরিপ, কর ও খাজনা পুনঃনির্ধারণের ব্যবস্থা নেয়া আছে। এ ব্যবস্থা বর্তমান বাংলাদেশে প্রচলিত আছে।
৪. মহলওয়ারি ব্যবস্থা : এ ব্যবস্থাতে এক বা একাধিক গ্রাম নিয়ে একটি মহল গঠিত হয়। মহলের খাজনা আদায়ের জন্য কৃষক ব্যক্তিগতভাবে এবং যৌথভাবে সরকারের নিকট দায়ী থাকে। মহলের মোড়ল খাজনা সংগ্রহ করে সরকারের নিকট জমা দেয়। এ প্রথা ভারতের মধ্য প্রদেশ, পাঞ্জাব প্রভৃতি এলাকায় প্রচলিত ছিল।
উপসংহার : উপর্যুক্ত ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে রায়তওয়ারি ব্যবস্থা বর্তমান প্রচলিত আছে।