বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারি পদক্ষেপসমূহ লেখ।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনাধিক্যের দেশ। এদেশে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১২০১ জন লোক বসবাস করে। গ্রামের তুলনায় শহর এলাকাতে ঘনবসতি অত্যন্ত বেশি। এদেশে ভূমির পরিমাণ যথেষ্ট নয়। অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে সরকার প্রতিটি জনগণের জন্য মৌল-মানবিক চাহিদার পূর্ণ নিশ্চয়তাদানে ব্যর্থ হচ্ছে। পিছিয়ে পড়ছে অর্থনীতি। এহেন অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সরকার কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে বেশ তৎপর। আর সেই লক্ষ্যেই সারাদেশে সরকার পরিবার
পরিকল্পনা কর্মসূচির যথার্থ বাস্তবায়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যা দেশের কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যার হার ঠিক রাখতে অনেকাংশে সহায়তা করছে।
→ বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারি পদক্ষেপসমূহ ঃ বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কিছু আলোকপাত করার প্রয়াস চালানো হলো ঃ
১. ব্যাপক প্রচারণা : বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক জনসংখ্যা সমস্যা ও পরিবার পরিকল্পনা বিভিন্ন নাটক, ছোটগল্প রেডিও, টেলিভিশনে সম্প্রচারের পাশাপাশি জাতীয় পত্র-পত্রিকাতে জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন লেখা ছাপানোর মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। ফলশ্রুতিতে গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে এখন বেশ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
২. ব্যবস্থাপনার ভিত্তি মজবুতকরণ ঃ সারাদেশে সহজেই যাতে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সম্পাদিত হয় সেজন্য সরকার যথেষ্ট সচেষ্ট থাকে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম পুনর্বণ্টন, ভিজিল্যান্স টিম গঠন ও থানা পর্যায়ে সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদের সৃষ্টি করা হয়।
৩. গবেষণা পরিচালনা : দেশে বিদ্যমান জনসংখ্যা সমস্যা, তা উত্তরণের উপায়, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, পরিবার পরিকল্পনাকে সহজলভ্য করতে ও বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে গবেষণা পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
৪. যথার্থ মূল্যায়ন : যথার্থভাবে কার্যক্রমে মূল্যায়ণের ওপর যেকোনো পদক্ষেপের সফলতা অনেকটা নির্ভর করে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছরই যথার্থ মূল্যায়ণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এজন্য সরকার নিয়মিত ও তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন, বিস্তৃত ও সময়ব্যাপী মূল্যায়ন এবং স্টিয়ারিং কমিটির মাধ্যমে যথার্থ মূল্যায়ণের আয়োজন করে থাকে ।
৫. জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ ঃ বিবাহিত দম্পতির জীবন যাতে সুখের ও কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যার পরিমাণ হয় সেই লক্ষ্যে সরকার জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন সামগ্রী যেমনঃ পিল, কনডম, নরপ্ল্যান্ট, ভ্যাসেকটমি, ফোম ট্যাবলেট, ফোম/জেলি, টিউবকেমি, ইনজেকশন ও আই উ ডি ইত্যাদি বিনামূল্যে সরবরাহ করে থাকে। যা গ্রামাঞ্চলের জনসংখ্যা হ্রাসে বেশ সহায়ক হয়েছে।
৬. প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক পদক্ষেপ ঃ বাংলাদেশ সরকার পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে বেশ কিছু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক পদক্ষেপও গ্রহণ করে থাকে। যেমন : মাঠকর্মীদের কার্যক্রম, উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহায়তা ও সমন্বয় কমিটি গঠন, উপজেলা বা থানা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে এ কমিটি গঠিত হয়ে থাকে।
৭. স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাদান ঃ বাংলাদেশের শহরগুলোতে অবস্থিত স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র থেকে শহরবাসীদের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। আর সরকার এগুলোর কার্যক্রমকে আরো বিস্তৃত করতে সর্বদাই থাকে সচেষ্ট। তাই সরকারের এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৮. মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন : নবজাতক ও মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে সরকার দেশের প্রতি উপজেলা বা থানা পর্যায়ে মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপনের সূচনা করেছে। আর এগুলোর কার্যক্রমকে উন্নত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
৯. গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র ঃ সরকারের আর্থিক অনুদানে গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্য ও কল্যাণ কেন্দ্র ও পরিবার পরিকল্পনা সেবাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের জনগণ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে ও কম সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত হচ্ছে। যা দেশের জন্য প্রকৃতপক্ষে মঙ্গল বয়ে আনছে।
১০. প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ঃ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচ্য। বাংলাদেশের জাতীয় জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (NIPORT) এর মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণদানের সুবন্দোবস্ত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে- (ক) নতুনদের ১ মাস ও
২ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ; (খ) ১৮ ও ২ মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ; (গ) ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের পূর্ণ প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ । যা পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে দৃঢ়বদ্ধভাবে পরিচালনায় সহায়তা করে।
১১. উদ্বুদ্ধকরণ ও পরীক্ষণ সামগ্রী সরবরাহ ঃ শহর-গ্রাম সর্বেত্র জনগণকে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও এ কর্মসূচি সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষণ সামগ্রী সরবরাহের ব্যবস্থাও করে থাকে। যা এদেশের জনসংখ্যা সমস্যাকে বহুলাংশে হ্রাস করতে সক্ষম হচ্ছে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি একটি দেশের জনগণের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। জনসংখ্যা কম হলে একটি দেশে নানাবিধ সমস্যা দ্রুত উত্তরণে সফল হয়। তাছাড়া’ উৎপাদনের উদ্বৃত্ত বেঁচে যায়। ফলশ্রুতিতে তা উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করে থাকে। সুতরাং, দেশ ও জনগণের বাংলাদেশে সরকারের নেওয়া
পদক্ষেপসমূহকে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাস্তবায়নের রূপদান করতে হবে। তাহলে এদেশে আবার ফিরে আসবে সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধির ছোঁয়া।