বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ উল্লেখ কর।

অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থা বিবর্তনের ধারাগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার ধাপগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে লিখ।
অথবা, বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার বিবর্তনের ধারা সম্পর্কে বর্ণনা দাও।
ভূমিকা :
বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থার ধারণাটি অতি প্রাচীন। বাংলাদেশে বর্তমানে আমরা যে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থা দেখতে পাই, তা এক দিনে প্রতিষ্ঠিত হয় নি । বিভিন্ন ক্রমবিকাশের মধ্য দিয়ে তা আজকের রূপ পেয়েছে।
বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থার বিবর্তনের ধারা : বাংলাদেশে বহু যুগ আগে থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত শাসনব্যবস্থা চালু ছিল। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান অবস্থায় আসা পর্যন্ত স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থাকে আমরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
১. ব্রিটিশপূর্ব আমল; ২. ব্রিটিশ আমল; ৩. পাকিস্তান আমল ও ৪. বাংলাদেশ আমল ।
১. ব্রিটিশপূর্ব আমল : ইংরেজদের শাসনের পূর্বেও আমাদের দেশে গ্রাম এলাকায় স্বায়ত্তশাসনের অস্তিত্ব ছিল। গ্রামের জনসাধারণ মিলিতভাবে তাদের সকল সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতেন। বিশেষত গ্রামের অভিজাত পরিবারের সদস্যগণ একত্রিত হয়ে গ্রামের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন এবং বিভিন্ন প্রকার সমাজকল্যাণমূলক কাজের উদ্যোগ নিতেন। শাসনব্যবস্থার দিক লক্ষ্য রেখেই ঐতিহাসিক চালস মেটকাফ (Charles Metcalf) বাংলার গ্রামগুলোকে ‘ক্ষুদ্র প্রজাতন্ত্র’ (Little Republic) বলে আখ্যায়িত করেছেন। গ্রামের সকলের অংশগ্রহণে গঠিত হতো গ্রাম্য পরিষদ । এই গ্রাম্য পরিষদ ছিল গ্রামের প্রশাসনিক এবং বিচার বিভাগীয় সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। গ্রাম্য নির্বাহীদেরকে গ্রাম্য পরিষদ নির্বাচন করতো, যাদেরকে পঞ্চায়েত বলা হতো। মুঘলরাও গ্রাম সরকারের প্রাচীন প্রথার উপর সামান্য হস্তক্ষেপ করতো।
২. ব্রিটিশ আমল : ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামল হতেই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থার গোড়াপত্তন ঘটে এই উপমহাদেশে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সরকার ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এর সুফল জনগণের দোর গোড়ায় পৌছে দিতে ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে এবং এসব সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে নানা সময়ে নতুন নতুন আইন পাস করে।
৩. পাকিস্তান আমল : সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৫৯ সালে এক নির্বাহী আদেশে চার স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রবর্তন করেন। এটিকে মৌলিক গণতন্ত্র বলে আখ্যায়িত করা হয়। এই চারটি স্তর হলো : ১. ইউনিয়ন কাউন্সিল ২. থানা কাউন্সিল ৩. জেলা কাউন্সিল ৪. বিভাগীয় কাউন্সিল। এই ব্যবস্থায় ইউনিয়ন কাউন্সিলের উপরই বেশি জোর দেয়া হয়েছিল । এই ব্যবস্থায় সারা পাকিস্তানে ৮০,০০০ নির্বাচনি একক (Electoral Unit) সৃষ্টি করা হয়। এই নির্বাচকমণ্ডলীগণ দেশের প্রেসিডেন্ট জাতীয় ও প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যদের নির্বাচন করতেন।
৪. বাংলাদেশ আমল : এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থাকে পুনর্গঠিত করার জন্য সরকার সচেষ্ট হয়ে উঠে। এদেশে বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন নামে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিচালনা করেন। সর্বশেষ বাংলাদেশে তিন স্তরের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থা বিদ্যমান- ১. ইউনিয়ন পরিষদ ২. উপজেলা পরিষদ ৩. জেলা পরিষদ। বর্তমানে ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যান এবং অন্যা ন্য সদস্ যগণ নির্বাচিত হলেও জেলা পরিষদে মনোনীত প্রশাসক দায়িত্বরত রয়েছেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুপ্রাচীন কাল থেকেই বাংলাদেশে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা -প্রবর্তিত হয়েছে। সকল আমলে স্থানীয় উন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করা হয়েছে।