অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে লিখ।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে আলোকপাত কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশ সুদীর্ঘ প্রায় আড়াইশত বছর ব্রিটিশ কলোনির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ দীর্ঘকালে বাংলাদেশে সামাজিক কাঠামোগত দিকের পরিবর্তন সূচিত হয়েছে বার বার। ব্রিটিশ ভারতের সামাজিক প্রভাব বিরাজমান ছিল এ সময়ে। কিন্তু ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়লে সামাজিক কাঠামোগত এক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এভাবে সামাজিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। সামাজিক বিন্যাসের ক্ষেত্রেও এ পরিবর্তনের ধারা বিদ্যমান ছিল।
বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় সামাজিক স্তরবিন্যাস : বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শহর ও গ্রামভিত্তিক স্তরায়ন লক্ষ করা যায়। বাংলার গ্রামীণ কৃষক সমাজে পাঁচ ধরনের সামাজিক স্তরবিন্যাস লক্ষণীয় ।যথা :
ক. জমিদার শ্রেণি,
খ.খুদে জমিদার,
গ. মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি,
ঘ. কৃষক জনগোষ্ঠী এবং
ঙ. ভূমিহীন কৃষক শ্রমিক শ্রেণি।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তিত সামাজিক স্তরবিন্যাস হিসেবে তিনটি ধারা লক্ষ করা যায়। যথা:
ক. শ্রেণি, খ. মর্যাদা এবং গ. ক্ষমতা।
এ তিনটি ধারার আলোকে গ্রামীণ সামাজিক স্তরবিন্যাস নির্ধারিত হয়। নিম্নে এ তিনটির বর্ণনা দেওয়া হলো :
১. শ্রেণিভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাস : এখানে বিশেষ মর্যাদা ও শ্রেণির উপর ভিত্তি করে স্তরায়ন করা হয়। কার্ল মার্কস এ শ্রেণিভিত্তিক স্তরায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। গ্রামীণ প্রধান উপকরণ হিসেবে ভূমিকে গণ্য করা হয়। তাই এর ভিত্তিতে স্তরায়ন করা হয়। যথা :
i. ভূমালিক শ্রেণি,
ii. বর্গাদার কৃষক শ্রেণি এবং
iii. ভূমিহীন কৃষক শ্রেণি।
২. মর্যাদাভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাস : গ্রামীণ সম্প্রদায় সামাজিক স্তরবিন্যাসের মানদণ্ড হিসেবে মর্যাদাকেও বিবেচনা করা হয়। এ মর্যাদা সমাজে দু’ভাবে নির্ণয় করা যায়। যথা :
ক. আরোপিত (Ascribed status) ও
খ. অর্পিত (Achieved status).
৩. ক্ষমতাভিত্তিক সামাজিক স্তরবিন্যাস : গ্রামীণ সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হলো ক্ষমতা বা Power। প্রশাসনিক স্তরবিন্যাসের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ক্ষমতার ভিত্তিতে গ্রামীণ সমাজে বিশেষ মর্যাদা লাভ করে থাকে। স্থানীয় চেয়ারম্যান, প্রশাসক প্রভৃতি ক্ষমতাবলে মর্যাদা পেয়ে থাকে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সামাজিক স্তরবিন্যাস সংঘটিত হয়েছে অত্যন্ত চড়াই-উতরাই করে। কারণ এখানে নানা শাসকগোষ্ঠী নানা সময়ে শাসন করেছেন যার প্রভাব সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী প্রকৃতির প্রভাবে আমাদের সামাজিক স্তরবিন্যাসের গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাই বাংলার সামাজিক স্তরবিন্যাস নিজস্ব কোনো কৃতিত্ব নয়। এটা পূর্ববর্তী ব্রিটিশ শাসকদের প্রদত্ত স্তরবিন্যাসের নীল নকশামাত্র।