প্রশ্নমালার অসুবিধাসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা কর ।

অথবা, প্রশ্নমালার অসুবিধাসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, প্রশ্নমালা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাসমূহ তুলে ধর।
অথবা, প্রশ্নমালা পদ্ধতির সমস্যাসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রশ্নমালা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এজন্য প্রশ্নমালাকে জরিপ কার্যের আত্মা হিসেবে বিবেচনা করা হয় । উপাত্তসংগ্রহে প্রশ্নমালার অনেক সুবিধা বিদ্যমান তবে সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে, যা অস্বীকার করা যায় না ।
প্রশ্নমালার অসুবিধাসমূহ : নিম্নে প্রশ্নমালার অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো :
১. নমনীয়তার অভাব : প্রশ্নমালা কৌশলে নমনীয়তার অভাব রয়েছে। কেননা এতে সকল উত্তরদাতার জন্য একই প্রশ্ন করা হয় এবং উত্তরও নির্ধারিত থাকে । গবেষক বা তথ্যসংগ্রহকারী উত্তরদাতার সামনে উপস্থিত থাকেন না বলে উত্তরদাতা কোনো প্রশ্ন বুঝতে না পারলে তা বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয় না ।
২. উত্তরদানের হার কম : প্রশ্নমালার একটি বড় অসুবিধা হলো এক্ষেত্রে আশানুরূপ উত্তর পাওয়া যায় না। কারণ অনেক সময়ই দেখা যায়, উত্তরদাতার ব্যস্ততা, স্মরণ না থাকা বা অবহেলার দরুন নির্দিষ্ট সময়ে প্রশ্নমালাটি পূরণ করে গবেষকের নিকট ফেরত পাঠান না। এছাড়াও ডাক বিভাগের অবহেলার দরুনও অনেক সময় প্রশ্নমালাটি যথাসময়ে গবেষকের নিকট পৌছায় না। এ কারণে প্রশ্নমালা কৌশলে কখনো কখনো ৬০% থেকে ৭০% পর্যন্ত উত্তর পাওয়া সম্ভব হয় না।
৩. সময় নষ্ট : খুব কম সময়ে এবং দ্রুত উত্তর পাওয়ার প্রত্যাশায় প্রশ্নমালা কৌশল ব্যবহার করা হলেও বাস্তবে এ কৌশলে উত্তর পেতে অনেক সময় নষ্ট হয়। কেননা প্রশ্নমালা প্রেরণ করার পর বারবার তাগিদ (Reminder) দিয়েও উত্তরদাতা সহজে উত্তরপত্র ফেরত পাঠান না বলে অনেক সময় নষ্ট হয় ।
৪. ব্যয়বহুল : আপাতদৃষ্টিতে প্রশ্নমালার সাহায্যে উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যয় কম মনে হলেও বাস্তবে তা নয় । কারণ ডাকযোগে প্রশ্নমালা প্রেরণ করতে এবং প্রশ্নমালা তৈরি করতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়। ফলে এটি একটি ব্যয়বহুল কৌশল ।
৫. সীমিত প্রয়োগ : প্রশ্নমালা কোনো এলাকার সমগ্ জনসংখ্যার উপর প্রয়োগ করা যায় না। কেবল শিক্ষিত এবং গবেষণা সচেতন (Research Conscious) ব্যক্তিদের উপর এ কৌশল প্রয়োগযোগ্য। অশিক্ষিত উত্তরদাতাদের ক্ষেত্রে প্রশ্নমালা প্রয়োগ করা যায় না। ফলে প্রশ্নমালা কৌশলের সীমিত প্রয়োগ লক্ষ করা যায় ।
৬. ব্যাখ্যার অনুপস্থিতি : প্রশ্নমালা কৌশলে উত্তরদাতার কাছে দুর্বোধ্য ও অস্পষ্ট প্রশ্নের ব্যাখ্যা করার সুযোগ যেমন থাকে না, তেমনি উত্তরদাতা কর্তৃক প্রদত্ত দুর্বোধ্য উত্তর ব্যাখ্যা করারও সুযোগ থাকে না । কারণ এক্ষেত্রে উপাত্ত সংগ্রহকারী এবং উত্তরদাতার মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মানবজাতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তথ্যসংগ্রহের অন্যতম প্রধান এবং বর্তমান সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে প্রশ্নমালা পদ্ধতি স্বীকৃত । তাই এখানে প্রশ্নকর্তাকে অত্যন্ত সতর্ক ও সচেতনতার সাথে কাজ করতে হবে ।