প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচিগুলো কি ছিল এর মূল্যায়ন কর।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ একটি যুদ্ধবিস্ত অর্থনীতির পাহাড় সমান চাওয়া পাওয়ার পটভূমিতে অর্থনীতিকে একটি নতুন দিক নির্দেশনাদানের উদ্দেশ্যে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনার প্রথম দুই বছরের ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে শেষ তিন বছরের একটি Hard-care programme হাতে নেয়া হয়। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মোট ব্যয় পরিমাণ ছিল ৪৪৫৫ কোটি টাকা।
→ সমাজকল্যাণ কর্মসূচিসমূহ ঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় সমাজকল্যাণ ক্ষেত্রে যে সকল উদ্দেশ্যে
গৃহীত হয় তা অর্জনের জন্য নিম্নোক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
১. দুস্থ মহিলা ও শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন ঃ ১৯৭২-৭৩ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা ও শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫৬টি কেন্দ্র চালু করা হয়।
২. সরকারি শিশুসদন ঃ এতিম, অসহায় ও দুস্থ ও পরিত্যক্ত শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৪টি শিশুসদন স্থাপনসহ ২২টি শিশু সদন পরিচালনা এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এতিম শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
৩. সোসিও ইকোনমিক সেন্টার ঃ মহিলাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সোমিও ইকোনসিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬০ সালে কিন্তু এর কার্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৭৩ সালে ঢাকার মিরপুর এবং রংপুরে এধরনের ২টি সেন্টার চালু করা হয়েছে।
৪. শিশুকল্যাণ কর্মসূচি ঃ শিশুদের কল্যাণের জন্য সরকারি শিশু সদন, ১টি দিবাযত্ব কেন্দ্র, ১টি শিশু আলয় প্রভৃতি পরিচালনা এবং ২৬টি বেসরকারি এতিমখানা ও রেজিস্টার্ড এতিমখানায় অর্থনৈতিক সহায়তা দান এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।
৫. যুব কল্যাণ কর্মসূচি ঃ এ কর্মসূচির আওতায় যুবকদের সার্বিক কল্যাণে‘পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র ও যুব হোস্টেলসমূহের উন্নয়ন এবং ১০টি যুবকল্যাণ কেন্দ্র স্থাপনে এ কর্মসূচি গৃহীত হয়।
৬. ভিক্ষুক ও ভবঘুরে পুনর্বাসন ঃ ভিক্ষুকদের সমস্যা দিনদিন বেড়ে চলেছে। বর্তমানে এটি একটি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ সমস্যারোধ এ পরিকল্পনার আওতায় ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য ২৫.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২টি কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
→ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচির মূল্যায়ণ নিম্নে তুলে ধরা হলো ঃ
১. জনসংখ্যাস্ফীতি হ্রাস ঃ বাংলাদেশে জনসংখ্যাস্ফীতির হার বেশি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানোর জন্য প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচি করা হয়েছিল। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩% থেকে ২৮% এ হ্রাস পেয়েছিল ।
২. বেকারত্ব ঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। ফলে কর্মসংস্থানের সংখ্যা হ্রাস পায় ।
৩. দারিদ্র্য হ্রাস ঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল । কিন্তু কর্মসূচি সফল না হওয়ায় দারিদ্র্য প্রকট আকার ধারণ করে।
৪. প্রবৃদ্ধির হার ঃ প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রবৃদ্ধির হার ৪ ভাগ অর্জিত হয়।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পর্যাপ্ত সম্পদের অভাবে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার GDP, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পদের এর স্বল্পতা এর জন্য দ্বায়ী ।