প্রতিবন্ধী কাকে বলে?

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ শারীরিকভাবে দুর্বল বা বিকৃতির মানবকে পঙ্গু বলা হয়। পঙ্গুদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে তাদেরকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজেরই একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধারণ মানুষের মত
প্রতিবন্ধীদেরও কিছু মৌল মানবিক চাহিদা রয়েছে। সেগুলোও পূরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এসব প্রতিবন্ধীদেরকেও স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবন-যাপনের সুযোগ প্রদান করতে হবে। প্রতিবন্ধী আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।
প্রচলিত অর্থে : প্রচলিত ধারণানুযায়ী পঙ্গু শব্দটি দ্বারা দৈহিক বিকলাঙ্গতা ও শারীরিক অক্ষমতা বুঝায়। কিন্তু আধুনিককালে এ ধারণার সম্প্রসারণ ঘটেছে। বর্তমানে এদের প্রতিবন্ধী নামে অভিহিত করা হয় ।
সাধারণ অর্থে : সাধারণ অর্থে প্রতিবন্ধী বলতে তাদেরকেই বুঝায় যারা শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থ-সামাজিক অক্ষমতা বা অসুবিধার কারণে সুষ্ঠুভাবে সামাজিক ভূমিকা পালনে অক্ষম এবং সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধাগ্রস্ত ও নির্ভশীল হয়ে জীবন অতিবাহিত করে।
→ প্রতিবন্ধী ঃ প্রতিবন্ধীরা একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠীর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যুতি, মানসিক দুর্বলতা এবং প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণে যেসব ব্যক্তি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে নির্ভরশীল ও অন্যের বোঝাস্বরূপ মনে হয় তাদেরকে প্রতিবন্ধী বলে। প্রতিবন্ধীরা খুব অসহায়। তাদের কল্যাণ সাধনে অবশ্যই
সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
→ প্রামাণ্য সংজ্ঞা ঃ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা নিম্নে দেওয়া হলো- সমাজকর্ম অভিধানের ভাষ্যানুযায়ী, “প্রতিবন্ধীত্ব হচ্ছে ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক এমন অবস্থা বা অসামৰ্থতা যা
তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন ক্ষমতা সীমিত করে। এ অবস্থা সাময়িক বা স্থায়ী এবং আংশিক ও সম্পূর্ণ হতে পারে।” ইউনিসেফের সংজ্ঞানুযায়ী, “পঙ্গুত্ব বা প্রতিবন্ধীত্ব বলতে ঐসব অসুবিধাকে বুঝায় যেগুলো মানুষের দৃষ্টিশক্তি, বাকশক্তি, শ্রবণশক্তি, লিখনশক্তি, হাঁটাচলা, বোধশক্তি বা অন্য কোনো কার্যক্রম ব্যাহত করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন-
যাপনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।” বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “প্রতিবন্ধীত্ব হচ্ছে কোনো কাজ যা একজন মানুষের জন্য স্বাভাবিকতা করার ক্ষেত্রে বাধা বা সামর্থ্যের অভাবকে বুঝায়।”
→ প্রতিবন্ধীত্বের মর্মকথা ঃ শারীরিক বিভিন্ন অপূর্ণতার দরুন বা প্রতিকূল আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম ও দুর্বল ব্যক্তিদেরই প্রতিবন্ধী বলা হয়ে থাকে। তাদের জীবনটা পুরোপুরি অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একজন প্রতিবন্ধীর উপস্থিতিতে পরিবারের সুখ সমৃদ্ধি কমে যায়। তাই প্রতিবন্ধীত্বকে কেউ বরণ করতে রাজি নয়। প্রতিবন্ধীত্বের তিনটি ধরন রয়েছে যেমন- ১. শরীর ও মনোবৃত্তীয় দুর্বলতা; ২. অক্ষমতা; ৩. বিকলাঙ্গতা বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচির বিস্তার ঘটাতে হবে। তবেই সুখী সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভবপর হবে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রতিবন্ধী তারাই যারা সমাজে শারীরিক ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে সফল না হয়ে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। প্রতিবন্ধীত্ব বরণ করার কারণে সমাজের সুখ-শান্তি কিছুটা বিঘ্নিত হয় । তাই সমগ্র জনগোষ্ঠী উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে সরকারকে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নিশ্চিত করতে হবে। .