অথবা, প্যারোল ব্যবস্থার নেতিবাচক দিকগুলো আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : অপরাধ প্রবণতা এক ধরনের মানবীয় আচরণ এবং অপরাধী ব্যক্তির চারিত্রিক বা ব্যবহারিক উন্নতি না ঘটলে তার মাঝের অপরাধ প্রবণতা কোন প্রকার শাস্তি প্রদান দ্বারা দূর করা সম্ভব নয়। আর তাই চারিত্রিক সংশোধনের ক্ষেত্রে “পাপীকে নয়, পাপকে ঘৃণা কর” এ নীতি গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে অপরাধ কর্মের চেয়ে অপরাধী যে কারণে অপরাধে লিপ্ত হয় সে কারণের উপরই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। আধুনিক বিশ্বে অপরাধীর সংশোধনমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। প্যারোল এ পদ্ধতিগুলোর মাঝে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি।
প্যারোল ব্যবস্থার অসুবিধা : প্যারোল ব্যবস্থার এতসব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এটা একেবারে ত্রুটিমুক্ত নয়। বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা করলে এর কতিপয় অসুবিধাও আমাদের সামনে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। নিম্নে প্যারোল ব্যবস্থার অসুবিধাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. প্যারোল ব্যবস্থা অভিযোগকারীর স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করে : প্যারোল ব্যবস্থায় অপরাধীর চরিত্র সংশোধনের উপর এত বেশি গুরুত্বারোপ করা হয় যে, এখানে অভিযোগকারী ব্যক্তির স্বার্থের দিকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। ফলে প্যারোল ব্যবস্থা বিচারের মূল্যবোধকে খানিকটা খর্ব করে।
২. অপরাধীর চারিত্রিক অধঃপতনের সুযোগ থাকে : যেহেতু প্যারোল ব্যবস্থায় অপরাধী পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ লাভ করে, সেহেতু সে যে প্রতিকূল কিংবা অপরাধমূলক পরিবেশে অপরাধ কাজে লিপ্ত হয়েছিল সে পরিবেশেই সে আবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায়। ফলে সে তার চারিত্রিক সংশোধনের ক্ষেত্রে আরো চারিত্রিক অধঃপতনের সুযোগ লাভ করে থাকে।
৩. প্যারোল ব্যবস্থায় অনেক ক্ষেত্রে দাগি অপরাধীও শাস্তি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় : যদি আদালত কোন কারণে যথাযথ সততার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পেশাদার দাগি অপরাধী অপরাধ করেও প্যারোলের সুযোগ লাভ করে তার শাস্তি এড়িয়ে যেতে পারে, যা সমাজের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৪. প্যারোল কর্মকর্তার সীমাবদ্ধতা : যেহেতু প্যারোল ব্যবস্থায় প্যারোেল কর্মকর্তাকে অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধনের সমুদয় দায়িত্ব পালন করতে হয়, সেহেতু তাকে হতে হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, দক্ষ, আশাবাদী ব্যক্তি। বস্তুত অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধনের দায়িত্ব পালন করা সহজ কাজ নয়, যার ফলে প্যারোল কর্মকর্তার পক্ষে অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধন কতটা সম্ভব তা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।
৫. প্যারোল ব্যবস্থা অপরাধীর ভণিতার আশ্রয় গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে : প্যারোল ব্যবস্থার একটি অন্যতম ত্রুটি হলো, অপরাধী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন ভণিতার আশ্রয় নিতে পারে যে, সে সত্যি সত্যি অপরাধ থেকে সংশোধিত হয়ে গেছে। কারণ প্যারোল ব্যবস্থায় অপরাধী তার আশু মুক্তির জন্য দ্বৈত আচরণের পরিচয় দিতে পারে এবং ভণিতার আশ্রয় গ্রহণ
করে সাময়িকভাবে সাধুবেশ ধারণ করতে পারে। ফলে সমাজে অপরাধের লাগামকে টেনে ধরা যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আধুনিক বহুমাত্রিক অপরাধের যুগে প্যারোল ব্যবস্থার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ প্যারোল ব্যবস্থায় শাস্তি মওকুফ করা হয় না, বরং শাস্তি স্থগিত রেখে তাকে সংশোধনের মাধ্যমে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়। প্যারোল ব্যবস্থা শাস্তি এবং সংশোধনের মাঝে এক অনন্য সমন্বয় সাধন করতে সক্ষম হয়, যা সমাজ এবং অপরাধী উভয়ের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। কতিপয় অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও অপরাধ দমনে প্যারোল যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তা জোর দিয়েই বলা যায়।