পুলিশ ও জনসাধারণের মধ্যকার সম্পর্ক আলোচনা কর ।

অথবা, পুলিশ ও জনসাধারণের মধ্যকার সম্পর্ক তুলে ধর।
অথবা, পুলিশ ও জনসাধারণের মধ্যকার সম্পর্ক নিরূপণ কর।
উত্তর৷ভূমিকা :
যে কোন সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পুলিশ বাহিনী একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠান। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে পুলিশ বাহিনীর মৌলিক দায়িত্ব হলো, মোটামুটিভাবে সেবামূলক মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা, মানুষের শাসনতান্ত্রিক অধিকার তথা স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায়বিচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ ও জনগণের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠে।
পুলিশ ও জনসাধারণের সম্পর্ক : পুলিশ জনগণের সেবক। জনগণের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান করা তথা সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করাই পুলিশের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ পুলিশের মূলমন্ত্র। এ পবিত্র দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হলে জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতা যে পুলিশের একান্ত অপরিহার্য
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী এ সমাজেরই একটি অংশ। তাই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য দক্ষতার সাথে পালন করতে হলে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা অর্জন করতে হবে। জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা ছাড়া পুলিশ বাহিনী কখনও তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। একমাত্র জনসেবার আদর্শ ও মনোভাব নিয়ে জনগণের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে অপরাধী ও সমাজবিরোধী ব্যক্তিদের কার্যকলাপ দূর করে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সহজ হবে। অবশ্য পুলিশ সেসব ব্যক্তির নিকট হতে কোন রূপ সাহায্য ও সহযোগিতা আশা করতে পারে না যারা জাতীয় স্বার্থ তথা সমাজবিরোধী কাজের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। এ শ্রেণির লোক সর্বদা পুলিশের আইনানুগ কাজের বিরোধিতা করবে কিংবা পুলিশের ভূমিকার নিন্দা করবে। অনেক সময় ক্ষমতাসীন সরকারের নীতি ও হুকুম পালন করতে পুলিশকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে অবাঞ্চিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয় এবং
ঐসব ক্ষেত্রে পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সহিষ্ণুতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। ফলে স্বভাবতই জনগণের নিকট পুলিশ সমালোচনা শিকার হয়। এসব অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সত্ত্বেও পুলিশ জনগণের বৃহত্তর কল্যাণ সাধনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে যে কোনো অবস্থাতে অন্যায় ও
অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামে প্রস্তুত থাকে।
উসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একটি দেশের জন্য জনগণ যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তাদের সেবার জন্য পুলিশ বাহিনীও অবশ্যম্ভাবী। তাছাড়া আইন প্রণয়ন ও কার্যকরণ এবং শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী জনগণের অত্যন্ত নিকটে অবস্থান করে। এজন্য পুলিশ ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।