অথবা, পাঠ্যক্রম কী?
অথবা, পাঠ্যসূচি কাকে বলে?
অথবা, পাঠ্যসূচি বা পাঠ্যক্রমের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, পাঠ্যসূচি কী?
অথবা, পাঠ্যক্রম বলতে কী বুঝ?
উত্তর৷ ভূমিকা : শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। বিশ্বের এমন কোন জাতি নেই যে জাতি শিক্ষা বিনা বড় হয়েছে। শিক্ষাই সকল অবকাঠামোর ধারক ও বাহক। তাই বলা যায় একটি সুস্থ
ধারার সমাজ বিনির্মাণের মূল উপকরণ হলো শিক্ষা। শিক্ষার মধ্যে সমকালীন জীবন বাস্তবতার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠে। এমনকি সামাজিক আশা-আকাঙ্ক্ষা, চলমান সামাজিক চাহিদা ও জীবন জিজ্ঞাসা ফুটে উঠে শিক্ষার মাধ্যমে। আর পাঠ্যক্রম হলো শিক্ষার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের অনন্য প্রতিশ্রুতি সংবলিত রূপরেখা। একটি শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পাঠ্যক্রম। আর এজন্য পাঠ্যক্রমকে হতে হবে স্বচ্ছ ও সাবলীল।
পাঠ্যক্রম বা পাঠ্যসূচি : পাঠ্যক্রম বলতে শিক্ষাজীবনের বিশেষ বিশেষ পর্যায়ে কয়েক বছরের পঠিতব্য বিষয়ের যে ইঙ্গিত বা তালিকা প্রণীত হয় তাকে বুঝায়। যেহেতু শিক্ষার পরিসর অত্যন্ত ব্যাপক সেহেতু জীবন ও জগতে শিক্ষণীয় বিষয় সীমাহীন । পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় কাজের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত প্রদান করা হয়। তাই এটাকে একপ্রকার পাঠ্যকোষও বলা চলে। কারণ পাঠ্যক্রমে জ্ঞানের যাবতীয় বিষয় থেকে প্রয়োজনীয় বিষয় সংবলিত তালিকা প্রণয়ন করা হয় এবং একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষার্জনকে সহজ করতে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়।
শব্দগত অর্থে পাঠ্যক্রম : পাঠ্যক্রমের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Curriculum Curriculum শব্দটি এসেছে মূলত ল্যাটিন শব্দ ‘Currer’ থেকে। ‘Currer’ অর্থ দৌড়ানো বা ‘ঘোড় দৌড়ের নির্দিষ্ট পথ। সুতরাং শাব্দিক অর্থে Curriculum অর্থ দৌড়ের জন্য নির্দিষ্ট পথ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : পাঠ্যক্রমকে বিভিন্ন মনীষী তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। নিম্নে কয়েকজন মনীষীর প্রদত্ত সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো :
‘Oxford English Dictionary’ পাঠ্যক্রমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, “পাঠ্যক্রম হলো বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পঠনপাঠনের নিয়মিত কোর্সসমূহ।”
Encyclopaedia of Britannica’ তে পাঠ্যক্রমের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “পাঠ্যক্রম হলো যে কোন শিক্ষান্তরে অনুসৃত জ্ঞানমূলক পাঠ্যবিষয়সমূহের সমবায়।”
ফ্রেডারিক ফ্রোয়েবেল (Friedrich Froebel) বলেছেন, “পাঠ্যক্রম মানবজাতির সকল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সার্থক এক সমন্বিত রূপ।”
এলিজাবেথ ম্যাকের (Elizabeth Mackeer) এর মতে, “পাঠ্যক্রম হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য উপস্থাপিত শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর সমষ্টি।”
সমাজবিজ্ঞানী R. Taylor এর মতে, “পাঠ্যক্রম হলো শিক্ষার সার্বিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিদ্যালয় কর্তৃক পরিকল্পিত ও পরিচালিত শিক্ষার্থীর সকল শিক্ষণ অভিজ্ঞতার সংগঠন ও বিন্যাস।”
উসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, বিশেষ পর্যায় বা স্তরের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাব্যবস্থার সম্পূর্ণ রূপরেখা হলো পাঠ্যক্রম। আর এ পাঠ্যক্রম গঠিত হয় মূলত শিক্ষার আদর্শ, উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, কর্মপ্রক্রিয়া, শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য, নীতিগত পদ্ধতির মূল্যায়ন প্রভৃতির সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে। অতএব বলা যায়, শিক্ষার সূচনা থেকে পরিসমাপ্তি পর্যন্ত আবশ্যকীয় সকল বিষয়সমূহই পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।