পল্লিউন্নয়নে গ্রাম সরকারের ভূমিকা লিখ।

অথবা, পল্লিউন্নয়ন গ্রাম সরকারের ভূমিকা উল্লেখ কর।
অথবা, “পল্লিউন্নয়নে গ্রাম সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য” তোমার মতামতে সপক্ষে যুক্তি দাও।
অথবা, পল্লিউন্নয়নে গ্রাম সরকারের কার্যাবলি উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
স্থানীয় সরকারের যাত্রা শুরু হয় ১৮৮০ সালের দিকে। স্থানীয় পর্যায়ের এ কাঠামোটি আজও অব্যাহত রয়েছে। তবে বিভিন্ন সময়ে এর কার্যক্রম ও কাঠামোর পরিবর্তন করা হয়েছে এবং বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদই (ইউপি) হচ্ছে একমাত্র নির্বাচিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর পরবর্তী সময়ে এর সংশোধনীগুলো ইউপির জন্য আইনগত কাঠামো প্রদান করেছে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও সার্কুলারের মাধ্যমে তাকে আরও সমন্বিত ও সুনিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে। যদিও এ মুহূর্তে ইউপি ও পৌরসভা ছাড়া স্থানীয় সরকারের অন্যান্য স্তর কার্যকর নেই, কিন্তু প্রস্তাবিত চার স্তরবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রবর্তিত হলে একটা ব্যাপক সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে বলে অনেকেই অনুমান করেন। পল্লিউন্নয়নে গ্রাম সরকারের ভূমিকা (Role of village government to rural development) : বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে চারস্তরবিশিষ্ট স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত আইন পাস হয়। যথা : গ্রাম পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ। কিন্তু ২০০৩ সালে গ্রাম পরিষদের পরিবর্তে গ্রাম সরকার বিল পাস করা হয়। ইউনিয়ন কাউন্সিলের
সহযোগী সংগঠন হিসেবে গ্রাম সরকার কাজ করে। পল্লিউন্নয়নে গ্রাম সরকারের প্রস্তাবিত কার্যাবলি নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. গ্রামের অবকাঠামো পরিকল্পনা (Infrastructure Plan) তৈরি করা, যেমন— রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ ইত্যাদি।
২. বিভিন্ন চলমান প্রজেক্টের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং উন্নয়ন রিভিউ করা।
৩. নারীনির্যাতন, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি প্রভৃতির বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রতিরোধ (Integrated Resistance) গড়ে তোলা।
৪. স্থানীয় নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার লেখাপড়ার অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর রাখা ও তদারকি করা এবং সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবকদের উৎসাহিত করা।
৫. পুষ্টি, টিকা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে সহায়তা করা।
৬. কৃষকদেরকে সার, বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ করা এবং এগুলোর অভাব দেখা দিলে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করা।
৭. কঠোর আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসনকে সাহায্য করা।
৮. পোল্ট্রি খামার ও ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন।
৯. মৎস্য চাষ ও গবাদিপশু পালনে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করা। এছাড়া পল্লির সার্বিক উন্নয়নের জন্য বৃক্ষরোপণ, নিয়মিত খেলাধুলার ব্যবস্থা, জন্ম মৃত্যু রেজিস্ট্রীকরণ, BGF এবং BGT এর কাজ তদারকি প্রভৃতি গ্রাম সরকারের অন্যতম কার্যাবলি। তাই বলা যায়, With the aim of lifting up villages from critical condition, village government system is introduced to the villages. (15 March, 2004, P-4, The Bangladesh Observer) অর্থাৎ, চরম অবস্থা থেকে গ্রামবাসীদের উন্নতিকল্পে গ্রাম সরকার
ব্যবস্থার সাথে তাদেরকে পরিচিত করানো হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, স্থানীয় সরকার হিসেবে বর্তমানে ইউপি বা ইউনিয়ন পরিষদ গ্রাম সরকার ব্যবস্থাই চালু রয়েছে। তবে উপজেলা ও জেলা পরিষদ কার্যকরের অপেক্ষায় বাংলাদেশের পল্লি এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে জনগণের কাছাকাছি এবং দৃশ্যমান একটি সরকার। পল্লির সামগ্রিক উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য। তবে গ্রাম সরকার দেরিতে হলেও ধীরে ধীরে কাজ করতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, গ্রাম সরকারের কার্যক্রম নিয়ে নানা সমালোচনা শোনা গেলেও গ্রামীণ উন্নয়ন প্রক্রিয়া এর অবদান সামান্য নয়। যাই হোক, বাংলাদেশে স্থানীয় সরকারের দৃঢ় সাংবিধানিক ভিত্তি রয়েছে এবং গ্রামীণ জনসংখ্যার সমাধান তথা গ্রাম উন্নয়নকল্পে অবদান রাখছে । এছাড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠীসহ প্রত্যেকেরই উচিত পল্লিউন্নয়নে মনোযোগী হওয়া।