পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধাগুলো লেখ।

অথবা, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধাগুলো কি কি?
অথবা, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির দুর্বল দিকগুলো তুলে ধর।
অথবা, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সমস্যাগুলো কি কি?
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিটি বিজ্ঞানই তার বিষয়বস্তু আলোচনা করার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।বিজ্ঞান হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানও এর ব্যতিক্রম নয়।আচরণ সম্পৰ্কীয় বিজ্ঞান হিসেবে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আচরণের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান যে কয়টি পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে, তার মধ্যে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি অন্যতম।পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। বহু পূর্ব থেকেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গবেষণায় এ পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অর্থাৎ পরীক্ষণ পদ্ধতির পূর্বে যে পদ্ধতি বহুলাংশে প্রচলিত ছিল তা হলো পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি।এমন কতকগুলো আচরণ বা ঘটনা আছে, যা গবেষণাগারে তৈরি করা যায় না।সেসব আচরণ বা
ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধা : নিম্নে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো :
১. ব্যক্তিনিষ্ঠ ফলাফল : পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত ফলাফল অনেকটা ব্যক্তিনিষ্ঠ হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত সংস্কার, পূর্ব ধারণা এবং পক্ষপাত প্রবণতা অপর ব্যক্তির আচরণ পর্যবেক্ষণ করে তার মানসিক অবস্থা অনুমানের ও যথাযথ ব্যাখ্যার পথে অন্তরায় হতে পারে। পক্ষপাতশূন্য হয়ে বিচার করতে না পারলে বিচার দোষদুষ্ট হয়। সাধারণত যাকে আমরা অপছন্দ করি অনেক সময় তার দোষ খুঁজে বেড়াই এবং যারা আমাদের প্রিয়পাত্র তাদের দোষ দেখেও উপেক্ষা করি। আবার কোনো স্বার্থপর ব্যক্তি অপরের দয়ার কাজকেও স্বার্থ থেকে উদ্ভূত মনে করতে পারে।
২. প্রাপ্ত তথ্য ভ্রান্ত হতে পারে : পর্যবেক্ষণলব্ধ মানসিক প্রক্রিয়ার জ্ঞান ভ্রান্ত হতে পারে। বাহ্যিক আচরণ বা দেহগত বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করে অপর ব্যক্তির মন সম্পর্কে অনুমান করার সময় আমরা নিজেদের ভাবনা চিন্তা এবং অনুভূতি অপরের মনে আরোপ করতে পারি। তার ফলে সে অনুমান ভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. কৃত্রিম আচরণ প্রদর্শনকারীর ক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য : কপট বা কৃত্রিম আচরণ প্রদর্শনকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির প্রয়োগ তেমন কার্যকরী হয় না। কারণ ভণ্ডের ভণ্ডামি বা কপট ব্যক্তির বাহ্য আচরণ বা দেহগত বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করে মনের খবর সঠিক অনুমান করা খুবই কঠিন।
৪. আচরণ বুঝা কষ্টকর : যে আচরণ পর্যবেক্ষণের বিষয়বস্তু সে আচরণ সুনির্দিষ্ট ও সহজবোধ্য নয়। বিভিন্ন মানসিক প্রক্রিয়ার বাহ্যপ্রকাশ একই রকম হতে পারে। কেউ আনন্দে অশ্রুপাত করে, আবার কেউ দুঃখে অশ্রুপাত করে। কোনটা আনন্দের হাসি আর কোনটা বিদ্রূপের হাসি সেটা বুঝে নেওয়া অনেক সময় খুবই কঠিন।
৫. মানসিক প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন বাহ্যপ্রকাশ : অনেক সময় একই মানসিক প্রক্রিয়ার বাহ্যপ্রকাশ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যার জন্য বাহ্যপ্রকাশ বা বাহ্য আচরণ পর্যবেক্ষণ করে তার অন্তর্নিহিত মানস প্রক্রিয়ার সঠিক জ্ঞান লাভ করা সবসময় সম্ভব হয় না। অনেক সময় দুঃখ মানুষকে অস্থির ও চঞ্চল করে তোলে, আবার অনেক সময় স্থির ও শান্ত করে তোলে।
৬. বহিঃপ্রকাশ থেকে গভীরতার জ্ঞান লাভ করা কঠিন : মনের বহিঃপ্রকাশ পর্যবেক্ষণ করে মনের গভীরতার স্তরের সঠিক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। আবার মনের নির্জ্জান স্তরের বহিঃপ্রকাশ পর্যবেক্ষণ করে নির্জান স্তর সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। কারণ নির্জ্জান মনের বহিঃপ্রকাশ অনেক ক্ষেত্রে অস্বভাবী।
৭. প্রয়োজনীয় ঘটনার জন্য অপেক্ষা : ইচ্ছা করলেই যখন তখন ঘটনার সৃষ্টি বা পর্যবেক্ষণ করা যায় না।পর্যবেক্ষককে কোনো ঘটনার জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
৮. তথ্যের যথার্থতা প্রমাণ কঠিন : এ পদ্ধতির একটি বড় দোষ হলো, প্রাপ্ত তথ্যের যথার্থতা যাচাই করা খুব কঠিন ব্যাপার। কারণ পর্যবেক্ষণ সহজে পুনরাবৃত্তি করা যায় না।
৯. চলের নিয়ন্ত্রণ না থাকা : এ পদ্ধতিতে চলসমূহের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহারে বেশকিছু অসুবিধা থাকলেও সামাজিক গবেষণায় এ পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে গবেষণাগারের কৃত্রিম পরিবেশে তথ্যানুসন্ধান সম্ভব হয় না, যেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা দরকার, পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি সেখানে একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।তাই পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির ক্ষেত্র অনেক ব্যাপক।