“পড়ছে মনে টগর চাঁপা বেলী চামেলী যুঁই, মধুপ দেখে যাদের শাখা আপনি যেত নুই।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিরচিত ‘ছায়ানট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘চৈতী হাওয়া’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : কবি এখানে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়ার স্মৃতিচারণ করেছেন।
বিশ্লেষণ : এক চৈতালি দিনে কবির জীবনে প্রেম এসেছিল। চৈতালি হাওয়ার উন্মাদনায় কবির জীবন রোমান্টিকতায় ভরে গিয়েছিল। প্রেমের আগমনে কবির জীবন ফুলে-ফলে প্রস্ফুটিত হয়েছিল। কিন্তু পূজারিণী যেমন দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য পুষ্পকে বৃন্ত চ্যুত করে তেমনি কবির প্রিয়া হৃদয়কে ছিন্ন করে হারিয়ে গেছে। কবির জীবনে এখন শুধু হাহাকার। তিনি আজ রিক্ত, সিক্ত। প্রকৃতিতে আজ আবার চৈতী হাওয়ার দোলা লেগেছে, এ উন্মাতাল প্রকৃতির মাঝে কবির প্রিয়া নেই। চৈতী হাওয়ার মাতাল করা আলোড়ন ফুলের বনে মহুয়ার নেশা ছড়িয়েছে। মৌমাছিরা মধুর নেশায় ছুটছে। মহুয়ার বনটি যেন ঘোরে দুলছে। দখিণা বাতাস কবি মনকে উচাটন করে তুলেছে। সে ‘চৈতী হাওয়া’ আবার ফিরে এসেছে, গাছের শাখায় টগর, চাঁপা, বেলী, চামেলী, যুঁই প্রভৃতি ফুল ফুটেছে। প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে। মধুভরা ফুল শোভা পাচ্ছে বৃক্ষ শাখায়। কবি ফুলে-ফলে বৃক্ষ-শাখার মধ্যে তাঁর প্রিয়াকে খুঁজে পেতেন। প্রকৃতির মাঝে তাঁর প্রিয়ার হাসিমাখা মুখ অনুভব করতেন। প্রিয়তমার বিগলিত হাসি এমনিভাবে ধ্বনিত হয়েছে-


‘হাসতে তুমি দুলিয়ে ভাল,
গোলাব হয়ে ফুটত গাল!’


কবি তাঁর প্রিয়তমার খোঁপায় পরিয়ে দিতেন চাঁপা ফুল। চৈতী দিনের প্রকৃতি কবিকে মুগ্ধ করেছিল।
মন্তব্য : কবি এখানে প্রকৃতির আবহে তাঁর প্রেমিক সত্তার স্বরূপটি তুলে ধরেছেন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a7%88%e0%a6%a4%e0%a7%80-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%93%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%80-%e0%a6%a8%e0%a6%9c/