নির্ভরশীলতা বলতে কী বুঝ?

অথবা, তাওয়াক্কুল বলতে কী বুঝ?
অথবা, নির্ভরশীলতা কাকে বলে?
অথবা, তাওয়াক্কুল কাকে বলে?
অথবা, সংক্ষেপে নির্ভরশীলতা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, তাওয়াক্কুল সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সুফিরা সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তারা মানুষের হৃদয়কে আল্লাহর সিংহাসন ভেবে সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে একাকার করে ফেলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য মানব আত্মার সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক বিকাশ সাধন এবং নিজ ক্ষুদ্র সত্তার বিলোপ ঘটিয়ে একাত্মতা স্থাপন। সুফিরা এ উদ্দেশ্যে কিছু মূলনীতির কথা বলেছেন। এই মূলনীতিগুলোর মধ্যে তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা অন্যতম।
তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা : সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর নির্ভর করে থাকার নাম তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতা। ইসলামি তৌহিদের ধারণা থেকে তাওয়াক্কুল আগত। আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান। তাঁর উপরই পরিপূর্ণরূপে বা পরিপূর্ণভাবে কিন্তু সে তার আদি মর্যাদা থেকে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে। সুফিবাদের বিশ্বাস, উচ্চতম স্তর থেকে মানুষের আগমন, বিচ্যুত হয়েছে। পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গের সে মাত্রা পুনার্জন করতে হলে তাকে আত্মার নিম্ন ও হীনতার বৃত্তির সাথে কঠোর সংগ্রাম করতে হবে। অত্মা দু’বিরোধ প্রবৃত্তির দ্বন্দ্ব ক্ষেত্র, নিম্নতর বৃত্তি ও উচ্চতর প্রজ্ঞা। তাই দেখা যায় যে, মানুষের অর্ধেক পশুর চেয়ে ও হীন, অন্য অর্ধেক ফেরেশতার চেয়েও উন্নত। আল্লাহর মিলন লাভে এ প্রবৃত্তিসমূহ বিরাট বাধাস্বরূপ। তাই তাদেরকে দমন ও পরাভূত করতে হবে। এসব প্রবৃত্তিগুলোকে আয়ত্ত্বে আনতে হলে নিজ আত্মাকে বিস্মৃত হয়ে আল্লাহর মধ্যে অবস্থান করতে হবে। এ স্তরেই হচ্ছে তাওয়াক্কুল। এ পর্যায়ে এসে কেউ কেউ আল্লাহর ধ্যান ছাড়া অন্য কিছু করেন না, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজনও মেটাতে চান না। তারা নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দয়া ও তত্ত্বাবধানে সমর্পন করেন। পরবর্তী সুফিগণ অবশ্য এ মত সংশোধন করেন এবং বলেছেন, তাওয়াক্কুল ব্যক্তিস্বাতন্ত্র ও ব্যক্তিগত বাসনা নিয়ে বেঁচে থাকার ধারণা সংগতিপূর্ণ। সুফিকে শুধু পরিত্যাগ করতে হবে অধিক সুখ ও বিলাসিতা। আল্লাহর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থেকেও আত্মশক্তির পূর্ণ বিকাশ সুফিদের লক্ষ্য।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিদের বীজ ইসলামের প্রারম্ভেই সূচিত হয়েছিল। হুজুরে পাক (স) প্রায়শই ধ্যানমগ্ন থাকতেন। সাহাবাগণ একনিষ্ঠভাবে তাকে অনুসরণ করে গেছেন। সুতরাং সুফিবাদে তাওয়াক্কুল বা নির্ভরশীলতার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।