অথবা, অনুতাপ বলতে কী বুঝ?
অথবা, তওবা কাকে বলে?
অথবা, অনুতাপ কাকে বলে?
অথবা, তওবা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
অথবা, অনুতাপ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সুফিবাদ এক প্রকার জীবন দর্শন। সুফিদের ধারণা, জগৎ স্বভাবতই এক মন্দ বাসস্থান যা মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতি বা বিকাশের অন্তরায়। তারা এ জগতের সবকিছুই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আধ্যাত্মিক উন্নতিই তাদের লক্ষ্য। তাই সুফিরা কিছু মূলনীতির কথা উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে তওবা বা অনুতাপ অন্যতম।
তওবা বা অনুতাপ : পাপের জন্য লজ্জিত হয়ে পুনরায় তা না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হওয়াকে তওবা বলে। মূলত তওবার অর্থ প্রত্যাবর্তন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ করা হয়, “তোমরা অনুতপ্ত হৃদয়ে তোমাদের স্রষ্টার পানে ফিরে যাও” (সূরা বাকারাহ, আয়াত.৫৪); “নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবাকারীকে ভালবাসেন” (সূরা বাকারাহ্, আয়াত ২২৪); তখন আল্লাহ্ তার [হযরত আদম (আ)} প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়ে মার্জনা করলেন (সূরা বাকারাহ, আয়াত-৩৭)। তওবার কার্যকারিতা তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল যা : ক. অন্তরে পাপের পূর্ণপ্রতীতি, খ. অনুতাপ এবং গ. ভবিষ্যৎ পাপকার্য হতে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প। এ তিন শর্ত পূর্ণ হলে আল্লাহ্ তওবা কবুল করতে পারেন। অবশ্য তা করতে তিনি বাধ্য নন। সুফির মতানুসারে তওবার পরিভাষাগত তাৎপর্য হচ্ছে আধ্যাত্মিক গ্রহণ। যারা সুফি পথ অতিক্রম করতে চান তাদের জন্য তওবা হচ্ছে প্রবেশের প্রথম পদক্ষেপ এবং ঐশী অনুগ্রহের একটি প্রতীক নিদর্শন। গভীর তাত্ত্বিক তওবা পাপের
স্বীকৃতি এবং পাপকার্য বর্জন ও তওবাকারী সমগ্র সত্তাকে আল্লাহর দিকে উন্মুক্ত করাকে অর্থ করে। কারণ একমাত্র এ অবস্থাতেই অনুতপ্ত তওবাকারীর পক্ষে আল্লাহর দিকে একাগ্রভাবে নির্বিষ্টচিত্তে প্রত্যাবর্তন সম্ভব।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিরা গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায় আধ্যাত্মিক জ্যোতি লাভ করেন। এ জ্যোতির সাহায্যে তিনি সত্যের অন্তনির্হিত তাৎপর্য অবলোকন করেন। তারা পাপ কাজের জন্য অনুশোচনা করেন ও তওবা করেন। তাই তওবা সুফিবাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।