ড গোবিন্দ চন্দ্র দেবের পরিচয় দাও।

অথবা, জি. সি. দেব কে? তাঁর শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, জি. সি. দেবের শিক্ষা ও কর্মজীবন সম্পর্কে লিখ।
অথবা, জি. সি. দেবের সম্পর্কে কী জান?
উত্তর৷। ভূমিকা :
গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের বিশিষ্ট মানবতাবাদী দার্শনিক ঋষিতুল্য জ্ঞানতাপস ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব বাঙালি দর্শনের মধ্যমণি। ড. জি. সি. দেব ছিলেন মানবপ্রেমিক ও সাধারণ মানুষের বন্ধু। ড. দেব সারাজীবন প্রেম ও অহিংসার অমৃত বাণী প্রচার করেছেন। তিনি দর্শনের সকল শাখায় প্রবেশ করে বিশাল জ্ঞান অর্জন করেন। ড. দেব বলেছেন, “সাধারণ মানুষ কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি বা কিছুসংখ্যক ব্যক্তির সমষ্টি নয়।” অধ্যাপক অরবিন্দু বসু প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দর্শনের এ পণ্ডিতকে ‘God’s good man’ বলে আখ্যায়িত করেন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন : ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ১৯০৭ সালের ১ জানুয়ারি সিলেট জেলার পঞ্চখণ্ড পরগনার লাউতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ঈশ্বরচন্দ্র দেব। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ছেলেবেলা থেকে মেধাবী ছিলেন। ১৯২৫ সালে তিনি সিলেটের বিয়ানিবাজার হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯২৭ সালে কলকাতার রিপন কলেজ হতে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। ১৯২৯ সালে সংস্কৃত কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স পাস করেন। ১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শনশাস্ত্রে কৃতিত্বের সাথে এম এ পাস করেন।১৯৪৪ সালে দর্শনশাস্ত্রে পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। এখানেই তাঁর শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি হয় না। এরপর তিনি মুম্বাই গিয়ে বেদান্ত দর্শনের উপর প্রায় বছর দেড়েক গবেষণা করেন।
কর্মজীবন : ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেবের কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি যখন এম এ পড়েন, তখন তিনি গৃহশিক্ষকতার কাজ করতেন। বোম্বে থেকে এসে তিনি কলকাতার রিপন কলেজে অধ্যাপনা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দিনাজপুরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ’ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি ঐ কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যোগ দেন এবং অত্যন্ত মেধা ও ন্যায়পরায়ণতার কারণে ১৯৬৩ সালে দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি দর্শন বিভাগের প্রফেসর নিযুক্ত হন। এছাড়া তিনি জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন বহু দিন। তিনি দু’বার ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ মহামানবকে হত্যা করে।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি যে, গোবিন্দ চন্দ্র দেব বাঙালি দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম দার্শনিক। বিশ্ব মানবতাবাদী এ দার্শনিক তাঁর কর্মময় জীবনে মানবতাবাদী দর্শন রচনা করে বাঙালি দার্শনিকদের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। বাঙালি দর্শনে তাঁর অবদান অপরিসীম।