জৈন স্যাদবাদের সবিচার ব্যাখ্যা কর।

জৈন স্যাদবাদের সবিচার ব্যাখ্যা:

জৈন দর্শনের মূলনীতি হল স্যাদবাদ। এটি বাস্তবতার জটিলতা এবং বহুমুখিতা বোঝার একটি পদ্ধতি। স্যাদবাদ অনুসারে, কোন বস্তু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সবসময়ই সীমিত এবং আপেক্ষিক। বাস্তবতার বিভিন্ন দিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সত্য হতে পারে।

স্যাদবাদের সপ্তভঙ্গী:

স্যাদবাদ সাতটি দৃষ্টিকোণের মাধ্যমে বাস্তবতার ব্যাখ্যা প্রদান করে:

  1. সৎ: বস্তু নিজের অস্তিত্বের দিক থেকে সত্য।
  2. অসৎ: বস্তু অন্য বস্তুর সাথে তুলনা করলে অসত্য।
  3. সৎ-অসৎ: বস্তু নিজের এবং অন্য বস্তুর সাথে সম্পর্কিত দিক থেকে সত্য ও অসত্য উভয়ই।
  4. অবক্তব্য: বস্তুর কিছু গুণাবলী আমাদের জ্ঞানের বাইরে, তাই সেগুলো সম্পর্কে কিছু বলা অসম্ভব।
  5. এবং: বস্তু একই সাথে সৎ, অসৎ, সৎ-অসৎ এবং অবক্তব্য।
  6. নায়: বস্তু উপরের পাঁচটি দৃষ্টিকোণের বাইরে নয়।
  7. স্যাৎ: বস্তু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সবসময়ই সাপেক্ষ এবং পরিবর্তনশীল।

উদাহরণ:

একটি ঘড়ি বিবেচনা করুন।

  • সৎ: ঘড়ি সময় দেখানোর জন্য তৈরি একটি যন্ত্র – এটি নিজের অস্তিত্বের দিক থেকে সত্য।
  • অসৎ: ঘড়ি সময়ের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব করে না – কারণ সময় ধারণাটি স্থির নয়।
  • সৎ-অসৎ: ঘড়ি কিছুক্ষেত্রে সময়ের সঠিক পরিমাপ প্রদান করে, আবার কিছুক্ষেত্রে ভুলও দেখাতে পারে।
  • অবক্তব্য: ঘড়ির নির্মাণের পেছনের উদ্দেশ্য, এর নির্মাতার মনোভাব ইত্যাদি আমাদের জ্ঞানের বাইরে।
  • এবং: ঘড়ি একই সাথে সৎ, অসৎ, সৎ-অসৎ এবং অবক্তব্য।
  • নায়: ঘড়ি উপরের পাঁচটি দৃষ্টিকোণের বাইরে নয়।
  • স্যাৎ: ঘড়ি সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সবসময়ই সাপেক্ষ এবং পরিবর্তনশীল।

স্যাদবাদের গুরুত্ব:

  • স্যাদবাদ আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
  • এটি আমাদেরকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবতা দেখতে উৎসাহিত করে।
  • স্যাদবাদ সহনশীলতা এবং বিতর্কহীনতার মনোভাব তৈরি করে।
  • এটি জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ এবং অনুসন্ধিৎসা বৃদ্ধি করে।