জাতীয় উন্নয়নে প্রশিকার অবদান বর্ণনা কর।

অথবা, জাতীয় উন্নয়নে প্রশিকার ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, জাতীয় উন্নয়নে প্রশিকার অবদান ও ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷। ভূমিকা :
প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ বাংলাদেশের একটি শীর্ষস্থানীয় এনজিও। ১৯৭৬ সালে এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। Societies Registration Act-1860 এর অধীনে এনজিওটি নিবন্ধিত হয় যার নিবন্ধন নং ১৯৭৬-৭৭ এর ৫৫৬৩/২৩ (তারিখ ১ অক্টোবর ১৯৭৬)। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ৬ জুলাই NGO Affairs Bureau তে এ এনজিওটি পুনরায় নিবন্ধিত হয় যার নিবন্ধন নং ১৪৭। জাতীয় উন্নয়নে প্রশিকার ভূমিকা ও অবদান যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
জাতীয় উন্নয়নে প্রশিকার অবদান : নিম্নে প্রশিকার ভূমিকা, অবদান ও কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. জন সংগঠন প্রতিষ্ঠা (People Organization Building-POB) : প্রশিকা কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হলো জন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা। প্রশিকার অন্য সকল কর্মসূচি এ কর্মসূচিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। প্রশিকা দরিদ্রদের নিয়ে প্রাথমিক দল গঠন করে যা সমিতি’ নামে পরিচিত। প্রাথমিক দলগুলো নিয়ে আবার ফেডারেশন গঠন করা হয়। “২০০৩ সালের জুন পর্যন্ত ১,৪৩,০৩৮টি প্রাথমিক দল গঠন করা হয়েছে। এ দল বা সমিতিগুলো নিয়ে বড় আকারে ১২,৯৮৮টি গ্রাম ফেডারেশন, ১,৫৯৩টি বস্তি ফেডারেশন, ১,১০৭টি ইউনিয়ন ফেডারেশন, ১০৪টি উপজেলা ফেডারেশন এবং ২৪টি শহর এরিয়া ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে।” উল্লেখ্য প্রশিকা প্রাথমিক দলগুলোকে বা সমিতিগুলোকে উন্নয়ন শিক্ষা বা ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে। তাছাড়া একজন কর্মীর মাধ্যমে প্রাথমিক দলগুলোর দলীয় সংগতি আনয়নের চেষ্টা করে।
২. মানব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (Human Development Training-HDT) : মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দলীয় সদস্যদের বিশ্লেষণধর্মী দক্ষতার উন্নয়ন ঘটায়, তাদেরকে দারিদ্র্যের কারণ সম্পর্কে সচেতন করে, সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের ধারণাকে ইতিবাচক করতে সাহায্য করে এবং তাদেরকে নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে। জুন ২০০১ থেকে জুন ২০০২ পর্যন্ত প্রশিকা মানব উন্নয়নের লক্ষ্যে ২,৪৯,৯২১টি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে। এর মধ্যে ৮৫টি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয় কেন্দ্রীয়ভাবে, ২,৭৫৭টি তৃণমূল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে, ৯,৬২৭টি গ্রামভিত্তিক এবং ২,৭৭,৪৫২টি দলভিত্তিক প্রশিক্ষণে মোট ৪৮,৩৫,২৪৯ জন অংশগ্রহণ করে; এর মধ্যে ৩৩,৩৭,৬৩১ জন মহিলা এবং ১৪,৯৭, ৬৫৮ জন পুরুষ। পাশাপাশি প্রশিকা ৯,৬২৩টি কর্মশালার আয়োজন করে।যাতে ১,৯৩,০৬৪ জন অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া ৫,৯২২ জন কর্মচারীর জন্য ২৩৩টি প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়।
৩. ব্যবহারিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ (Practical Skill Development Traning-PSDT) : প্রশিকার যেসব দলীয় সদস্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক এবং আয় উপার্জনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে প্রশিকা তাদের জন্য ব্যবহারিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করে। এ কর্মসূচি তাদের প্রকল্পসমূহ ফলপ্রসূভাবে বাস্তবায়নের জন্য কারিগরি জ্ঞান ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করে। “২০০৩ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৪৮,৬৬৫টি ব্যবহারিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়। এ প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোতে মোট ১.০৯ মিলিয়ন অংশগ্রহণকারী যোগদান করে।”
৪. সর্বজনীন শিক্ষা কর্মসূচি (Universal Education Programme-UEP) : প্রশিকা শিক্ষাকে মানব উন্নয়নের মৌল হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করে।প্রশিকা তার সর্বজনীন শিক্ষার মাধ্যমে একটি নিরক্ষরমুক্ত ও অজ্ঞতামুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যা গরিব মানুষদের ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে সাহায্য করবে।
“৫৩,৫৩৬টি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র এবং ২০,০৫৪টি অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রশ িকা ১.৬১ মিলিয়নের অধিক শিশু ও বয়স্ককে সাক্ষর জ্ঞানদান করেছে।” উল্লেখ্য ২০০২ অর্থবছরে মোট ১,৯৮,৬৪৯ জন সাক্ষর জ্ঞান লাভ করেছে।একই অর্থ বছরে ১০.৭২৫টি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
৫. শহুরে দরিদ্র উন্নয়ন কর্মসূচি (Urban Poor Development Programme-UPDP) : প্রশিকার শহুরে দরিদ্র উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালিত হয় বস্তির বাসিন্দাদের জন্য। প্রশিকা বস্তির দরিদ্রদের অসহায়ত্ব দূর করা এবং তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধাদানে প্রশিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।২০০১-২০০২ আর্থিক বছরে “বস্তিগুলোতে ৪,২৫৯টি প্রাথমিক দল গঠন করে। এ প্রাথমিক দলগুলোর সদস্য সংখ্যা ৪,৮২,৬৭৩ জন, যার মধ্যে ৬৪,৬৩৩ জন নারী এবং অবশিষ্ট পুরুষ সদস্য। তাছাড়া একই সময়ে ৪০০টি অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয় এবং বস্তির নির্যাতিত নারীদের জন্য ১,০৬৪টি কেইস এর ক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়।” ২০০৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় বস্তিগুলোতে প্রায় ২৩,৯১৪টি দল গঠন করা হয়েছে।
৬. উন্নয়ন নীতি বিশ্লেষণ ও এডভোকেসি প্রতিষ্ঠান (Institute of Development Policy Analysis and Advocacy-IDPAA) : প্রশিকা এর নিজের এডভোকেসি প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সালে স্থাপন করে। এ প্রতিষ্ঠানটি ঢাকায় প্রশিকার কেন্দ্রীয় অফিসে অবস্থিত। এর ৩টি বিভাগ রয়েছে।বিভাগগুলো হলো : ১. Policy Research Department, 2. Policy Eduction Department and 3. Policy Communication Department. এ বিভাগগুলো দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে এডভোকেসি করে থাকে।
৭. কর্মসংস্থান এবং আয়বর্ধনমূলক কার্যাবলি (Employment and Income Generating Activities – EIGA) : সফলভাবে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য অধিক আয়বর্ধনমূলক কর্মসূচি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা প্রয়োজন।এটি ঋণ ও সঞ্চয়ের আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে করা হয়। ২০০৩ সালে জুন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ কর্মসূচির অধীনে ২০.০৩ বিলিয়ন টাকা ঋণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৭.০২ মিলিয়ন কর্মসংস্থান বা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
৮. পরিবেশমূলক কৃষি কর্মসূচি (Ecological Agriculture Programme-EAG) : জমিকে রাসায়নিক সার ও বিষের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে প্রশিকা পরিবেশবান্ধব বিকল্প জৈব সারের প্রবর্তন করে। বিকল্প সার ও কীটনাশকের ব্যবহার করার জন্য প্রশিকা প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে।
৯. পশু সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি (Livestock Development Programme-LDP) : প্রশিকা’র পশু সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি এর সদস্যদের নিকট খুবই জনপ্রিয়। এর কারণ হলো এতে স্বল্প ব্যয় হয় ও স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা ও পুষ্টি পাওয়া যায়। পশু সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রশিকা পশুগুলোকে ভ্যাকসিন প্রদান করে এবং কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করে থাকে।তাছাড়া একই সাথে হাঁস-মুরগি, মৎস্য চাষের ব্যাপারেও দলীয় সদস্যদের সাহায্য করে।
“এই কর্মসূচির আওতায় প্রশিকা মোট ৩৩৮ জন ভ্যাকসিন দাতা, ২০ জন কৃত্রিম প্রজননে দক্ষ ব্যক্তি এবং ১৩৮ জন Paravents নিয়োগ করা হয়।২০০১-২০০২ অর্থবছরে এ কর্মসূচির অধীনে ৪.২৭ মিলিয়ন হাঁস-মুরগি এবং ০.৩৭ মিলিয়ন গবাদি পশুকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। তাছাড়া ৯,৫২৭টি গাভীকে কৃত্রিম প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়।সেই সাথে ৭,৮২৩টি পশু সম্পদ প্রকল্পের ন্য ৩৫৭.৮ মিলিয়ন টাকা ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হয়। এ কর্মসূচির জন্য এ ঋণের ৭৭% পায় মহিলাদের দল।”
১০. মৎস্য উন্নয়ন কর্মসূচি (Fisheries Development Programme-FDP) : মৎস্য উন্নয়ন কর্মসূচি প্রশিকার গ্রামীণ দরিদ্র সদস্যদের জন্য একটি আয় বর্ধনমূলক কর্মসূচি। “এ কর্মসূচির অধীনে প্রশিকা ২০০১-২০০২ অর্থবছরে ২৪,৪৩,৯৬,৭০০ টাকা দলীয় সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করেছে। মোট ৩,৯৪০টি মৎস্য প্রকল্পে এ টাকা বিতরণ করা হয় যার মধ্যে ২,৪১ ০টি প্রকল্প ছিল মহিলা দলীয় সদস্যদের।”
১১. পরিবেশ সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন (Environmental Protection and Regeneration-EPR) : প্রশিকার পরিবেশ সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সামাজিক বনায়ন ও প্রাকৃতিক বনভূমি সংরক্ষণ এবং পরিবেশমূলক কৃষি কর্মসূচি। এ কর্মসূচির অধীনে প্রশিকার সদস্যরা বিগত ১১ বছরে ৮৮.৯৮ মিলিয়ন বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণ করেছে। রাস্তার ধারে, বাঁধের ধারে, রেললাইন বরাবর প্রভৃতি স্থানে এ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।রোপণকৃত বৃক্ষের প্রায় ৯৮% বেঁচে আছে। পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য প্রশিকাকে বাংলাদেশ সরকার ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার ২০০০’ প্রদান করেছে।
১২. সেচ ও ভূমি কর্ষণ প্রযুক্তি সেবা কর্মসূচি (Irrigation and Tilling Technology Service Programme-ITTSP) : সেচ ও ভূমি কর্ষণ সেবা কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূমিহীন এবং প্রান্তিক কৃষকদের পানির ব্যবহার ভূমি কর্ষণের যন্ত্রপাতির মালিক হতে সাহায্য করে। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে এ কর্মসূচির আওতায় ৩,০৩০ জন কৃষকের মাধ্যমে ২০,৪০৫ একর জমি চাষ করা হয় এবং তা সেচ সুবিধার আওতায় আসে। প্রশিকার এ কর্মসূচির অধীনে কর্মসংস্থান সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমে ৭২০টি দলীয় সদস্যগণ উপকৃত হয়েছে। তাছাড়া ২৩২টি দলীয় সদস্যরা কৃষি সরঞ্জামাদিতে মালিকানা লাভ করে।
১৩. রেশম চাষ উন্নয়ন কর্মসূচি (Sericulture Development Programme-SDP) : রেশম চাষ উন্নয়ন কর্মসূচি প্রশিকার একটি আকর্ষণীয় এবং সফল কর্মসূচি। এর মাধ্যমে প্রশিকার দলীয় সদস্যদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। এ কর্মসূচির অধীনে ২৮৭ বিঘা জমিতে তুঁত চাষ করা হয়।সেই সাথে তুঁত গাছ সংরক্ষণের জন্য বা দেখাশোনার জন্য ৩৫৯ জন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেয়া হয়। উল্লেখ্য রেশম চাষের জন্য রেশম চাষিদের জন্য প্রশিকা ঋণ দল কর্মসূচিও চালু করেছে।
১৪. মৌমাছি পালন কর্মসূচি (Apiculture Programme-AP) : মৌমাছি পালন কর্মসূচি প্রশিকার একটি প্রতিশ্রুতিশীল, পরিবেশবান্ধব এবং আয় বর্ধনমূলক কর্মসূচি। এ কর্মসূচির অধীনে প্রশিকা ঋণ প্রদান করে থাকে।তাছাড়া প্রশিকা এ কর্মসূচির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে। “২০০১-২০০২ অর্থবছরে এ কর্মসূচির আওতায় ১৭,২৩৪ কেজি মধু উৎপাদিত হয়।”
১৫. গৃহায়ন কর্মসূচি (Housing Programme-HP) : গৃহায়ন কর্মসূচি প্রশিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতায় প্রশিকা গৃহহীন পরিবারের জন্য ৩১,৭৫৭টি গৃহনির্মাণ করেছে। তাছাড়া এক্ষেত্রে প্রশিকা তার দলীয় সদস্যদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। গৃহনির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতের প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।যেসব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হচ্ছে সেসব ক্ষেত্রগুলো হলো :
i. MCR টাইলস উৎপাদন,
ii. নমনীয় ইস্পাতের উপকরণ উৎপাদন,
iii. আর. সি. সি. পিলার এবং
iv. কাঠ বা বাঁশের রাসায়নিক ট্রিটমেন্ট।
১৬. স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণ কর্মসূচি (Health Infrastructure Building Programme-HIBP) : প্রশিকার এ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নলকূপ স্থাপন, নলকূপের পানির আর্সেনিক পরীক্ষা, নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটারি পায়খানা স্থাপন ও সরবরাহ, মাটির নিচে ডেইলেজ সিস্টেম চালু ইত্যাদি। প্রশিকার এ কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ বালাইয়ের হাত থেকে অনেক পরিবার মুক্ত হচ্ছে। “প্রশিকা ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে মোট ১৪,৪৬৪টি নলকূপের পানি পরীক্ষা করে। এতে ৩১% নলকূপে সহনীয় মাত্রার আর্সেনিক লক্ষ করা যায় এবং ৩৬% নলকূপের পানিতে বিপজ্জনক মাত্রার আর্সেনিক লক্ষ করা যায়। প্রশিকা ১,৪১,১৮৪টি স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা বিতরণ করে, ৮টি Arsenic Removal Plant স্থাপন করে ৭টি Surface Water Treatment Plant স্থাপন করে এবং ২৬২টি নলকূপ বিতরণ করে।”
১৭. স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচি (Health Education Programme-HEP) : প্রশিকা র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দলীয় সদস্যদের জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, টিবিএ প্রশিক্ষণ, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচিকে সহায়তা প্রদান, Maternal development, বাংলাদেশ সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প বাস্তবায়ন ইত্যাদি।
২০০১-২০০২ অর্থ বছরে প্রশিকা ৬,২২,৫৯৪ জন দলীয় সদস্যকে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। টিবিএ ট্রেনিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ২৮০ জন, অক্ষমতা সম্পর্ক বিষয়ে অংশগ্রহণ করে ২০,৫৪০ জন।” প্রশিকা স্বাস্থ্য শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন দিবসও উদ্যাপন করে থাকে। যেমন- পুষ্টি দিবস, মাতৃদুগ্ধ দিবস ইত্যাদি।
১৮. ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কর্মসূচি (Small Economic Enterprise Development Programme-SEED ) : এ কর্মসূচির আওতায় প্রশিকা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদান করে এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে। “২০০১-২০০২ অর্থবছরে প্রশিকা এ কর্মসূচির অধীনে ২,২৬৩টি প্রকল্পে মোট ১৫৮.১৭ মিলিয়ন টাকা বিতরণ করে। এর মাধ্যমে ৫,৪৯১টি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়।”
১৯. উন্নয়ন সহায়ক যোগাযোগ কর্মসূচি (Development Support Communication Programme- DSCP) : এ কর্মসূচি মূলত অডিও ভিজ্যুয়ালভিত্তিক। এ কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ও চিত্র ধারণ ও তা টিভি চ্যানেলে প্রদর্শনের ব্যবস্থা। ডকুমেন্টারি ফিল্ম প্রস্তুতও এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত।এর মাধ্যমে মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করা যায়। ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে এ কর্মসূচির আওতায় ২২টি ভিডিও ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করা হয়েছে,৪২টি ভিডিও স্যুট তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া একই সময়ে মধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে খবর পরিবেশন করা হয়।
২০. জনগণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কর্মসূচি (People’s Cultural Programme-PCP) : প্রশিকার সাংস্কৃতিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য হলো সচেতনতা ও ক্ষমতায়নের বিকাশ সাধন। প্রশিকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে জীবনমুখী গান, নাটক, নৃত্য ইত্যাদি। এগুলো আর্থসামাজিক বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটায়।প্রশিকা তার কার্যক্রম শুরুর পর থেকে মোট ৯৩৯টি নাট্যদল Organize করেছে।এ নাট্যদল ৮৬,৭৩৬টি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছে।
২১. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি কর্মসূচি (Disaster Management and Preparedness Programme- DMPP) : প্রশিকা দুর্যোগ বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করে থাকে এবং দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে মানুষের করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা দান করে। তাছাড়া দুর্যোগ কবলিতদের মাঝে শুকনা খাদ্য বিতরণ, ওষুধ সরবরাহ, শীতবস্ত্র বিতরণ এবং বাড়িঘর মেরামতের জন্য নগদ অর্থ বিতরণ করে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত কর্মসূচিগুলো ছাড়াও প্রশিকার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বিত বহুমুখী নারী উন্নয়ন কর্মসূচি, প্রভাব পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন সেল কর্তৃক পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন, কর্তৃক বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশনা, কর্তৃক তথ্যসংগ্রহ, অন্যান্য সংস্থাকে সাহায্য কর্মসূচি গবেষণা ও প্রদর্শন প্রকল্প মানবসম্পদ বিভাগ কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রশিকার এসব কর্মসূচি মানবকল্যাণে যথেষ্ট অবদান রেখে চলেছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/