অথবা, জাতি প্রথা কী?
অথবা, জাতি প্ৰথা বলতে কী বুঝ?
অথবা, জাতি প্ৰথা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : জাতি-বর্ণ ধর্মীয় অপবিত্র এবং পবিত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে যা হিন্দুধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত বা স্বীকৃত । জাতি-বর্ণ, উঁচু-নিচু মর্যাদার ভিত্তিতে ক্রমে চ্চভাবে মর্যাদা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। সাধারণত প্রতিটি জাতি-বর্ণ এবং অনেকক্ষেত্রে উপজাতি বর্ণ এক একটি আন্তঃবৈবাহিক গোষ্ঠী। জাতি-বর্ণকে পেশাভিত্তিক গোষ্ঠীও বলা যেতে পারে।
জাতি-বর্ণ প্রথা : আদিকাল থেকে জাতিভেদ প্রথা ভারত-বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে। দীর্ঘকাল যাবৎ জাতিভেদ প্রথা প্রচলিত থাকায় সমাজব্যবস্থায় তার ভিত্তি সুদৃঢ় হয়ে যায়। সামাজিক স্তরবিন্যাসের অন্যতম প্রকরণ হলো জাতি-বর্ণ প্রথা। জাতি-বর্ণ প্রথা ভারতীয় সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে এক বিশেষ রূপ পেয়েছে। Caste শব্দটি স্পেনীয় Cesta হতে এসেছে; যার অর্থ প্রজনন বা বংশগত ধারা। সাধারণত ভারতীয় কিছু সমাজকে জাতি-বর্ণভিত্তিক সমাজ বলে অভিহিত করা হয়। ভারতীয় জাতি-বর্ণ প্রথা সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে অদ্বিতীয়।
International Encyclopedia of the Social Science-এ বলা হয়েছে, “A caste system then can be – social to occur when a society is composed of birth ascribe hierarchically ordered and culturally ethnic group.” জাতি-বর্ণ, ধর্মীয়, অপবিত্র এবং পবিত্র ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে যা হিন্দু ধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত বা স্বীকৃত । Risley ভারতবর্ষে ৩৬০টি জাতি-বর্ণ এর কথা উল্লেখ করেছেন। প্রত্যেকটি আবার কয়েকটি ক্ষুদ্র জাতিতে বিভক্ত। হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী ৪টি বর্ণ হলো :
১. ব্রাহ্মণ বা পুরোহিত শ্রেণি : জাতি-বর্ণ প্রথার সবচেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী। ব্রাহ্মণদের কাজ ধর্ম-কর্ম করা।
২. ক্ষত্রিয় বা যোদ্ধা শ্রেণি : এদের কাজ যুদ্ধবিগ্রহ করা। ক্ষত্রিয়রা ব্রাহ্মণদের চেয়ে কম মর্যাদার অধিকারী।
৩. বৈশ্য : এদের কাজ ব্যবসাবাণিজ্য। এরা ক্ষত্রিয়দের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম মর্যাদার অধিকারী |
৪. শূদ্র বা শ্রমজীবী শ্রেণি : এদের কাজ ছিল কায়িক পরিশ্রম। এদের মর্যাদা বৈশ্যদের চেয়ে কম।
জাতি-বর্ণ এর বৈশিষ্ট্যসমূহ : জাতি-বর্ণ এর বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ :
১.জাতি-বর্ণ প্রথা ক্রমোচ্চভাবে সজ্জিত।
২. জাতির সদস্যপদ জন্মসূত্রে প্রাপ্ত।
৩.বর্ণের সদস্যপদ অপরিবর্তনীয়।
৪.এক বর্ণের সাথে অন্য বর্ণের খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা নিষিদ্ধ ।
৫. বিবাহ আন্তঃগোষ্ঠীয় ।
৬. পেশাগত দিক থেকে প্রত্যেকটি বর্ণ পৃথক।
৭. জাতি-বর্ণ ভারতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ।
উপসংহার : উপসংহার বলা যায়, প্রত্যেকটি ব্যক্তি একটি সুনির্দিষ্ট জাতি-বর্ণে জন্মগ্রহণ করে। সে অর্থে জাতি- বর্ণের সদস্যপদ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। তবে প্রতিটি জাতি বর্ণের সামাজিক ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ রয়েছে। বিভিন্ন জাতি- বর্ণের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বিদ্যমান যা ধর্মীয় দূরত্বের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে।