অথবা, জমির পরিমাণ ও মালিকানার ভিত্তিতে গ্রাম সমাজের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, জমির পরিমাণ ও মালিকানার ভিত্তিতে গ্রাম সমাজের শ্রেণিবিন্যাস কিরূপ?
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক স্তরবিন্যাস মানব সমাজের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে আমরা বুঝি সমাজের মানুষ উঁচু, নিচু, সমান বিভিন্ন সামাজিক পদমর্যাদায় ভাগ করা। সমাজের মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণি, জাতি ও বর্ণে ভাগ করা হয়। তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং শ্রেণির অসম অবস্থান বা অসম মর্যাদা বিন্যাসকে বুঝায়।
জমির পরিমাণ ও মালিকানার ভিত্তিতে গ্রাম সমাজের স্তরায়ন : বাংলাদেশের যে কোনো গ্রাম সমাজের স্তরায়নে জমির পরিমাণ ও মালিকানার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জমির পরিমাণের ভিত্তিতে একটি গ্রামে নিম্নরূপ শ্রেণি দেখতে পাওয়া যায় :
১.ধনী কৃষক,
২.প্রান্তিক জমির মালিক,
৩.বর্গাচাষি বা ভাগচাষি,
৪.ভূমিহীন কৃষক-মজুর।
১. ধনী কৃষক : এরা গ্রামের সর্বোচ্চ জমির মালিক। এদের জমি থেকে যে আয় হয় তা দ্বারা ভরণপোষণ বাদেও প্রচুর উদ্বৃত্ত থাকে। ঐ উদ্বৃত্ত ফসলের টাকায় তারা আরো জমি কেনে, ঘরবাড়ির মান উন্নত করে।
২. প্রান্তিক চাষির মালিক : প্রান্তিক জমির মালিক তারাই যাদের জমির পরিমাণ এমন যে, নিজেদের কোনো রকমে ভরণপোষণ চলে, উদ্বৃত্ত প্রায় থাকে না বললেই চলে।
৩. বর্গাচাষী বা ভাগচাষী : এরা স্বল্প জমির মালিক। এরা ধনী কৃষকের জমি বর্গাচাষ করে। এদের সাথে ধনী কৃষকের সম্পর্ক প্রায় শোষণের।
৪. ভূমিহীন কৃষক-মজুর : বাংলাদেশে ভূমিহীন কৃষি মজুরের সংখ্যা অত্যধিক। সাধারণত ধনী ও প্রান্তিক চাষী পরিবারের জমিতে এরা মজুরির বিনিময়ে কাজ করে। এরা দিন আনে দিন খায়। দৈহিক শ্রমই এদের আর্থিক উৎপাদনের একমাত্র উৎস।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, গ্রাম প্রধান এই দেশে ক্ষমতার ভিত্তি হিসেবে জমি/ভূমিকে ধরা হয় । এর ভিত্তিতে সৃষ্টি হয় সামাজিক অসমতা।