জাতীয় সমাজকর্মী সমিতি তত্ত্বাবধানকে কোন দৃষ্টিকোন থেকে শিক্ষণ প্রক্রিয়া হিসেবে তত্ত্বাবধানকে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, তত্ত্বাবধান একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া- বিষয়টি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, তত্ত্বাবধান একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া বিষয়টি আলোচনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে শিক্ষানবিস কর্মীরা তাদের জ্ঞানের অপূর্ণতা দূর করতে পারে।এর মাধমে ভুল সংশোধন করা যায় এবং নতুন কিছু জানা যায়। এটি শিক্ষানবিস কর্মীদের বা কর্মচারী ও কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের ভালোভাবে কাজ করার জন্য নতুন কিছু শিক্ষা দেয়।
শিক্ষণ প্রক্রিয়া হিসেবে তত্ত্বাবধান
National Association of Social Worker প্রকাশিত Social Work Year Book তে শিক্ষণীয় প্রক্রিয়া হিসেবে তত্ত্বাবধান এর উল্লেখ করতে গিয়ে নিম্নের দিকগুলো আলোকপাত করেন :
১. তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে ব্যক্তির প্রয়োজন এবং সামর্থ্যের মধ্যে স্বীকৃত ও শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে।
২. অন্যান্য নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে তত্ত্বাবধানে মানৰ সম্পৰ্ক বিজ্ঞান ও সমাজকর্ম এবং সমাজকর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সুশৃঙ্খল জ্ঞানের এমন এক সমাবেশ ঘটে, যা শিক্ষার একটি উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে ।
৩. তত্ত্বাবধানে ছাত্র-শিক্ষকের মত শিক্ষামূলক পন্থা বিরাজিত ।
৪. অন্যকে বুঝানোর জন্য আত্মসচেতনতাবোধ প্রয়োজন বলে এতে এ ধরনের উদ্ভব ঘটে থাকে।
৫. তত্ত্বাবধান প্রাত্যহিক ঘটে বলে এর মাধ্যমে পরিবর্তনশীল দ্বন্দ্বমুখর জ্ঞানের একটি সংরক্ষিত ধ্যানধারণার জন্ম পাওয়া সম্ভব ।
৬. এতে শিক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা এবং আবেগের যথাযথ প্রকাশের মাধ্যমে ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে একটি সারণিকরণ ধারণার জন্ম হয়।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় তত্ত্বাবধান একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া।কারণ এর মাধ্যমে নতুন কিছু শেখা যায় এবং জানা বিষয়ের অসারতা দূর করা যায়। তত্ত্বাবধান যে একটি শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া এ সম্পর্কে নিয়ে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
১. তত্ত্বাবধান ব্যবহারিক শিক্ষণীয় বিষয় : তত্ত্বাবধান প্রতিষ্ঠানের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম নিয়ে সম্পাদিত হয়।কর্মচারীগণ বাস্তব ক্ষেত্রে তত্ত্বীয় অর্জিত জ্ঞানের প্রয়োজন ঘটান।কিন্তু Theorical Knowledge কে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গিয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। অবশ্য এ সমস্যাগুলো তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে নির্মূল করা সম্ভব।ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অনেক জ্ঞান কর্মচারীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনেকাংশে সাহায্য করে ।
২. যোগাযোগের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তত্ত্বাবধানের শিক্ষা : তত্ত্বাবধান যোগাযোগের একটি অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত।প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, দায়িত্ব, কর্তব্য, সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে তত্ত্বাবধানে উন্মুক্ত আলাপ আলোচনা হয়।ফলে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি হয় এবং প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি প্রকৃতি সফলতা ও ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা হয়। এতে সবাই ভুলত্রুটি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়, যা শিক্ষার একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত।
৩. নিয়মিত বৈঠক : তত্ত্বাবধানের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ, শৃঙ্খলা,গতিশীলতা প্রভৃতির শিক্ষা দেয়। নিয়মিত বৈঠকের ফলে কর্মচারীদের মধ্যে শুধু নিয়মানুবর্তিতাই নয়, বরং কাজের জবাবদিহিতাও বেড়ে যায়। নিয়মিত বৈঠকে প্রশিক্ষণার্থীদের সমাপ্ত কাজ পর্যবেক্ষণ করা হয় বলে তাদেরকে আরও বেশি।দায়িত্ব সচেতন হতে হয়, যা তাদেরকে কাজের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে অবহিত হতে সহায়তা করে।
৪. দক্ষতা বৃদ্ধির শিক্ষা : তত্ত্বাবধান কর্মীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তদারককারী সার্বক্ষণিক তার অধীনস্থদের উপর নজর রাখতে হয়। ফলে অধীনস্থরা নিজেদের কাজের প্রতি মনোযোগী হয় এবং কোন কাজ না বুঝলে তত্ত্বাবধায়ক তাকে সে কাজ বুঝিয়ে দেন। এতে কর্মক্ষেত্রে কর্মীরা আস্তে আস্তে দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়ে উঠে।
৫. Process recording : নিয়মিত Process recording প্রশিক্ষণার্থীদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে।নিয়মিত Process recording কর্মীদের পথপ্রদর্শক হিসেবেও ভূমিকা রাখে, যা কর্মীদের দায়িত্ব সচেতন করে।তাই কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে Process recording এর কৌশল শিক্ষার অন্যতম উৎস।
৬. Trial and error : তত্ত্বাবধানে মূলত Trial and error process এর মাধ্যমে চলে । একজন কর্মচারী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে কতটুকু সঙ্গতি রেখে কাজ করছে দায়িত্ব পালনের ত্রুটিবিচ্যুতি প্রভৃতি দেখা তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব।দায়িত্ব পালনকালে কর্মচারীরা কোথায় কোথায় ভুল করে তত্ত্বাবধায়ক সে ভুল সংশোধনের উপর জোর দেন এবং যাবতীয় নির্দেশনা দেন। ব্যবহারিক জীবনে এমন কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, যা বাস্তবে Trial and error process ছাড়া দেখা সম্ভব নয়।
৭. Repetition : একজন ব্যক্তির দায়িত্ব নিয়ে তিনি নিয়মিত Process recording করেন, নিয়মিত বৈঠকে বসেন এবং Trial and error process মাধ্যমে এগিয়ে যান। এসব কারণে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে Repetition হয়ে থাকে। ফলে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সঠিকতা আনয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং ভুলত্রুটির ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়কের সহায়তা নিতে পারেন।
৮. মূল্যায়ন : মূল্যায়ন তত্ত্বাবধানে শিক্ষণ প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তত্ত্বাবধানে সমাপ্ত কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা ও মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়ন থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ব্যক্তির আত্মশক্তিতে এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থাকে সচল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৯. মনিটরিং প্রক্রিয়ার শিক্ষা : প্রতিষ্ঠানের চলমান কার্যাবলি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না মনিটরিং তা পর্যালোচনা করে। প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যাবলি মনিটরিং এর মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।এর মাধ্যমে ব্যক্তি দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে পারেন।তাই মনিটরিং তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বিস্তৃত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি।সে সাথে তত্ত্বাবধানের গুরুত্বও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের ছোট একটি ভুল সমগ্র কর্মসূচিকে নষ্ট করে দিতে পারে।এজন্য প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মসূচিতে তত্ত্বাবধানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।অনেকে তত্ত্বাবধানকে প্রশাসনের চালিকাশক্তি আবার কেউ কেউ প্রশাসনের মেরুদণ্ড হিসেবে অভিহিত করেন। একজন নতুন লোককে প্রতিষ্ঠানের উপযোগী শক্তিরূপে গড়ে তুলতে তত্ত্বাবধান একটি শিক্ষণ প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d/