গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য লিখ ।

অথবা, গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
অথবা, গৌণ গোষ্ঠীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা দাও।
অথবা, গৌণ গোষ্ঠীর চারত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তর ভূমিকা :
মানুষের মধ্যে গোষ্ঠীবদ্ধতা প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে যা প্রত্যেক সমাজে আজও বিভিন্নভাবে বিদ্যমান। ফলে সমাজবিজ্ঞানের যে কোনো আলোচনায় গোষ্ঠী শব্দটি অনেকাংশে গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু সমাজবিজ্ঞান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করে থাকে। গোষ্ঠীর শ্রেণি বিভাজনে আমরা লক্ষ করেছি যে, বিভিন্ন সমাজতাত্ত্বিক বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে গোষ্ঠীর পৃথকীকরণ করেছেন। ফলে গোষ্ঠীর বিভাজনের মধ্যে প্রাথমিক বা মুখ্য গোষ্ঠী ও গৌণ গোষ্ঠীর আলোচনা প্রয়োজনীয় ।
গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য (Characteristics of secondary group) : গৌণ গোষ্ঠীর প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
ক. গৌণ সম্পর্কের প্রাধান্য (Dominance of secondary relations) : সম্পর্কটা অনেকাংশে নৈর্ব্যক্তিক, পরোক্ষ ও চুক্তিভিত্তিক।
খ. বৃহৎ আয়তন (Largeness of the size) : গৌণ গোষ্ঠী আকারে অনেক বড় যেমন রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন ও রোটারি ক্লাব ইত্যাদি।
গ. সদস্যপদ (Membership) : এ ধরনের সংগঠনে সদস্যপদ প্রধান স্বেচ্ছাসেবী। কেউ ইচ্ছা করলে যুক্ত হতে পারে অথবা ত্যাগ করতে পারে।
ঘ. সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ নয় (No physical besis) : যেহেতু আকারে গৌণ গোষ্ঠী বড় এবং আন্তর্জাতিক বা জাতীয় পর্যায়ের ফলে সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক তেমন ঘনিষ্ঠ হতে পারে না।
ঙ. পরোক্ষ যোগাযোগ (Indirect communication) : গৌণ গোষ্ঠী বেশিরভাগই পরোক্ষ। যোগাযোগের মাধ্যম হলো টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি যা দ্বারা প্রত্যক্ষ যোগাযোগ সম্ভব নয়।
চ. গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণের ধরন (Nature of group control) : সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক নিয়মিতকরণে সামাজিক নিয়ন্ত্রণের অনানুষ্ঠানিক মাধ্যম হলো কম গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আইন, পুলিশ ও আদালত ইত্যাদি গোষ্ঠীগত আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ছ. গোষ্ঠী কাঠামো (Group structure) : গৌণ গোষ্ঠী আনুষ্ঠানিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে। একটি আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ ক্ষমতা পরিচালনা করে এবং এখানে শ্রম বিভাজন বিদ্যমান।
জ. ব্যক্তিত্বের উপর সীমিত প্রভাব (Limited influence on personality) : জনসাধারণ তাদের বেশিরভাগ সময় অতিবাহিত করে প্রাথমিক গোষ্ঠীর মধ্যে। ফলে গৌণ গোষ্ঠীর সাথে তাদের সংস্পৰ্শতা খুবই সীমিত। সুতরাং, গৌণ গোষ্ঠী ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের উপর কম প্রভাব বিস্তার করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, যে সকল গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে না বরং সদস্যদের মধ্যে অত্যন্ত গৌণ অথবা দূর সম্পর্ক বিদ্যমান তাদেরকে গৌণ গোষ্ঠী বলে। মূলত গৌণ গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতা খুবই কম। এখানে ঘনিষ্ঠতা বা অন্তরঙ্গতা নেই বললেই চলে।