অর্থবা, কেস স্টাডি প্রস্তুতের প্রক্রিয়াগুলো আলোচনা কর।
অথবা, কেস স্টাডি প্রস্তুতের প্রক্রিয়াসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, কেস স্টাডি প্রস্তুতের প্রক্রিয়াসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : শিক্ষানবিশ সমাজকর্মীকে কেস স্টাডির জন্য প্রথমে কোনো কেসটি গ্রহণ করবে তা নির্বাচন করতে হয়। কেস ব্যবস্থাপনার এটি একটি অংশ। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী বা শিক্ষানবিশ সমাজকর্মীকে কেসস্টাডি প্রস্তুতের জন্য বিশেষ কিছু কাজ করতে হয়। কেস স্টাডি প্রস্তুত করার সময় কতকগুলো কাজ সম্পন্ন করতে হয় এবং এগুলো একটি প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়। যাকে কেস স্টাডি প্রস্তুতের কার্যক্রম, প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।
কেস স্টাডি প্রস্তুতের প্রক্রিয়া/কার্যাবলি : নিম্নে কেস স্টাডি প্রস্তুতের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হলো :
কেস গ্রহণ : কেস স্টাডি প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়ার প্রথমেই মাঠকর্মী কেস বা ঘটনা গ্রহণ করে থাকে। এজন্য প্রথমেই কেস গ্রহণের পক্ষে যুক্তিসহকারে একটি বক্তব্য দিয়ে থাকে। অর্থাৎ কেস গ্রহণের পটভূমি প্রদান করে। মূলত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কেস গ্রহণের গুরুত্ব ও সুযোগ থাকার কারণে মাঠকর্মী কেস গ্রহণে তৎপর হয়।
১. স্বাস্থ্যগত অবস্থা : মাঠকর্মীকে এ পর্যায়ে সাহায্যার্থীর স্বাস্থ্যগত বা শারীরিক অবস্থা বর্ণনা করতে হয়।সাহায্যার্থীদের জটিল রোগ বা অন্য কোনো সমস্যায় ভোগছে কিনা এখানে তা বর্ণনা করতে হয়। দৈহিক রোগ থাকলে এর জন্য কোনো সেবা পেয়েছে কিনা তাও এক্ষেত্রে সংযোজন করতে হয়।
২. পারিবারিক অবস্থা : এ পর্যায়ে সাহায্যার্থীর পারিবারিক তথ্য তুলে ধরা হয়। পারিবারিক সদস্য সংখ্যা, পেশা,আয়, সাহায্যার্থীর সাথে সদস্যদের সম্পর্ক, বৈবাহিক মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রভৃতি সবই এর অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে সাহায্যার্থীর পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়া যায়। এতে করে সাহায্যার্থীকে অনুধাবন করা সহজ হয়।
৩. আর্থিক অবস্থা : সাহায্যার্থীর আর্থিক অবস্থা বলতে তার স্বচ্ছলতা বা অস্বচ্ছলতাকে বুঝায়। এক্ষেত্রে সাহায্যাধীর নিজের আয় আছে কিনা, অন্য কেউ তার উপর নির্ভরশীল কিনা, আর্থিক সমস্যা সে কিভাবে সমাধান করে প্রভৃতি সব কিছু এ পর্যায়ে তুলে ধরতে হয়। এখানে পরিবারের আয় ও ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
৪. সামাজিক অবস্থা : কেস স্টাডি প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়ায় মাঠকর্মীকে সাহায্যার্থীর সামাজিক অবস্থা জানতে হয়।এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে খোঁজ খবর নিতে হয়। সাহায্যার্থী সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মাঠকর্মীকে এদের সাথে সম্পর্ক রাখতে হয়।
৫. পেশাগত অবস্থা : পেশাগত অবস্থা বলতে সাহায্যাথীর আয় উপার্জনকে বুঝায়। সাহায্যার্থী যে কাজের মাধ্যমে উপার্জন করে থাকে মাঠকর্মীকে এ সম্পর্কে জানতে হয়। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তির নানা ধরনের বিপত্তি থাকতে পারে। এর ফলে সাহায্যার্থীর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পায়।
৬. জনমিতিক অবস্থা : সাহায্যার্থীর ব্যক্তিগত অবস্থা জানার মাধ্যমে মাঠকর্মী জ্যামিতিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়। এজন্য সাহায্যার্থীর নাম, বয়স, উচ্চতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বৈবাহিক অবস্থা, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা প্রভৃতি দিকগুলো তুলে ধরা হয়। ফলে কেস স্টাডি প্রস্তুত করা সহজ হয়।
৭. মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা : কেস স্টাডি করার সময় সাহায্যার্থীর মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা জানা অত্যাবশ্যক। সাহায্যার্থী অনেক ব্যক্তিগত সমস্যা প্রকাশ করতে চায় না। এর প্রভাবে সাহায্যার্থীর চিন্তাগ্রস্ততা বেড়ে যায় এবং শরীর ও মনে এর প্রভাব পড়ে। এছাড়া সাহায্যার্থীর মধ্যে হতাশা, চাপ, উদ্বিগ্ন বেড়ে যায়।
৮. বিনোদনমূলক অবস্থা : কেস স্টাডি প্রস্তুত করার সময় মাঠকর্মীকে সাহায্যার্থীর বিনোদনমূলক অবস্থাও তুলে ধরতে হয়। বিনোদন সাহায্যার্থীর আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। গল্প করা, টিভি দেখা, বই পড়া, গান শোনা, খেলাধুলা,ভ্রমণ প্রভৃতির মাধ্যমে সাহায্যার্থী বিনোদন করতে পারে। এজন্যই বিনোদন পরিস্থিতি এখানে তুলে ধরে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় মাঠকর্মীকে সাহায্যার্থীর কেস স্টাডি-প্রস্তুত করার সময় উপরিউক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লিখতে হয়। এসব বিষয় লেখা ও অনুধাবনপূর্বক সাহায্যার্থী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ফলে মাঠকর্মীর পক্ষে কেস স্টাডি করা সহজ হয়।