অথবা, কাজী আব্দুল ওদুদের প্রগতিশীল ধারণাগুলো ইসলামী ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কী না?
উত্তর৷ ভূমিকা : ধর্মকে দার্শনিক আলোকে দেখার এবং সার্থক ও সফল জীবন রচনার যে প্রয়াস তা শুধু উনিশ শতকের শুরুতেই পরিলক্ষিত হয় তা বলা যাবে না। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয় কুমার দত্ত প্রমুখের মত প্রগতিশীল চিন্তার লোক পরবর্তীতেও অনেক দেখা যায়। এ রকমই একটি প্রগতিশীল দার্শনিক আন্দোলন হচ্ছে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন । আর এ আন্দোলনের মূল প্রাণশক্তি হিসেবে যিনি কাজ করেছেন তিনি কাজী আব্দুল ওদুদ।
কাজী আব্দুল ওদুদের প্রগতিশীল ধারণাগুলো ইসলামী ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ : কাজী
আব্দুল ওদুদের ইসলামিচিন্তা তাঁর বিরাট দার্শনিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। তিনি গান্ধীর অহিংসা রাজনীতির সাথে সমর্থন প্রকাশ করেন। গান্ধী যেমন অহিংস নীতিটিকে রাজনীতিতেও নিয়ে এসেছিলেন তেমনি কাজী আব্দুল ওদুদ তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় অহিংস নীতি সমর্থন করেন। তিনি জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তিকে কখনও সমর্থন করেন নি। তিনি অবিভক্ত ভারতেই শান্তির
পথ খুঁজেছেন। তিনি বলেছেন, বিভক্তিতে শান্তি থাকতে পারে না; অবিভক্ত ভারতেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মানসিক
উন্নতি করলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
তিনি বলেছেন, যদি ভারত বিভক্তি অত্যাবশ্যকই হয়ে পড়ে, তবে ভাষার ভিত্তিতে তা হওয়া উচিত। তিনি হিন্দু- মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারত বিভাগকে সমর্থন করেন নি। অসাম্প্রদায়িক ভারতীয় অথবা ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার বিকাশ তাঁর কাম্য ছিল। ইসলামি রাষ্ট্রের সমর্থক ছিলেন না। তিনি যে কোন ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের বিরোধী ছিলেন। শরিয়তের পুনঃপ্রবর্তন যে
অসম্ভব সে কথা তিনি স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছেন এভাবে, “শরিয়তের পুনঃপ্রবর্তন অবশ্য অসম্ভব, কেননা অতীত অস্তমিত মৃত তার যে অংশ সজীব সে তুমি ও আমি; অতীত পুনরুজ্জীবিত হবে না।” তিনি জাতীয় জীবনে যেমন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তেমনি প্যান ইসলামবাদ সমর্থন করেন নি। এ প্রসঙ্গে ‘মুস্তাফা কামাল সম্পর্কে কয়েকটি কথা’
প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, “প্যান ইসলামি চিন্তা মুসলমানকে বহির্মুখী করে তোলে এবং স্বদেশ ও স্বজাতির প্রতি উদাসীন করে। মুসলমানদের স্বদেশ ও স্বজাতির দুঃখ দৈন্যের অবসানের চিন্তা করা উচিত। প্যান ইসলামবাদ নয়; বাস্তব জাতীয়তাবাদই মুসলমানদের কাম্য।” সুতরাং কাজী আব্দুল ওদুদের প্রগতিশীল ধারণাগুলো ইসলামী ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম চিন্তানায়ক কাজী আব্দুল ওদুদ সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার যুক্তিভিত্তিক বিচার বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেন, যা৷ তাঁর গূঢ় দার্শনিক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করে। ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি প্রভৃতি স্পর্শকাতর বিষয়েও তিনি সুন্দর আলোচনা পর্যালোচনা করেছেন। সর্বোপরি বলা যায়, একজন প্রগতিশীল দার্শনিক হিসেবে তিনি বাংলাদেশ দর্শনে বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন।