কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব লিখ।

অথবা, কর্মমুখী শিক্ষার ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, কর্মমূখী শিক্ষার গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
শিক্ষা সমাজের মৌলিক কার্যাবলির মধ্যে অন্যতম। এ শিক্ষা সুস্থ সমাজজীবনের চালিকাশক্তি। মানুষ শিক্ষার সংস্পর্শে এসে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়। শিক্ষা মানুষকে কর্মজীবনের জন্য উপযোগী করে
গড়ে তোলে । একইভাবে শিক্ষা ব্যক্তির সার্বিক উন্নয়ন ঘটায়। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজের উন্নয়ন ঘটাতে পারে । সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্নে বর্তমানে কর্মমুখী শিক্ষাকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব : ব্রিটিশরা দীর্ঘ প্রায় দু’শত বছর এদেশে রাজত্ব করেছে। তারা তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুবিধার্থে এদেশে শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করে। এ শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীকে কায়িক শ্রমের প্রতি বিমুখ হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। পুঁজিগত ও তত্ত্বীয় শিক্ষা গ্রহণ করে ব্যক্তির পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জিত হতে পারে না। শিক্ষার্থীকে ব্যবহারিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারলে ব্যক্তি কর্মজীবনে সফলতা লাভ করতে পারে। এদিক বিচারে কর্মমুখী শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ । কর্মমুখী শিক্ষা কতকগুলো কারণে গুরুত্বপূর্ণ । যেমন-
১. কর্মমুখীকরণ : কর্মমুখী শিক্ষা আক্ষরিক অর্থেই শিক্ষার্থীকে কর্মমুখী করে গড়ে তোলে। দীর্ঘদিন এদেশে ঔপনিবেশিক শাসন বিরাজ করেছিল। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থায় তত্ত্বীয় শিক্ষা প্রদান করা হতো, যা কর্মের মাধ্যমে অর্জনকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না। কর্মমুখী শিক্ষা সকল ধরনের কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জনকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
২. বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা : ব্যক্তি সামাজিক জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যক্তিকে মেধা ও মনের পাশাপাশি পেশীর সমন্বয়ে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শেখায়। কর্মমুখী শিক্ষা ব্যক্তিকে বিনা সংকোচে কায়িক পরিশ্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।
৩. আকাঙ্ক্ষার গুরুত্ব : শিক্ষার্থী ভেদে শিক্ষার প্রতি ভিন্ন ভিন্ন আগ্রহ ও প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও প্রবণতার দিকে লক্ষ্য রেখে কর্মমুখী শিক্ষার প্রচলন সাধারণ শিক্ষাকে পরোক্ষভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে।
৪. মানসিকতার পরিবর্তন: সমাজে যারা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে সমাজ তাদেরকে একটু অন্য চোখে দেখতে চায়। অর্থাৎ সমাজে তারা কম মর্যাদা পায়। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে পারলে সমাজে কায়িক পরিশ্রমের প্রতি মানসিকতার পরিবর্তন আনা সম্ভব।
৫. কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা : বাংলাদেশে প্রচলিত সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বহু মানুষ উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ পায় না। এছাড়াও স্বল্প শিক্ষিত ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত অনেক মানুষের ভাগ্য একই ধরনের বিড়ম্বনায় পতিত হয়। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, কর্মমুখী শিক্ষায় গুরুত্ব অপরিসীম। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী কর্মমুখী হয়ে উঠতে পারে এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। এ ছাড়া এ শিক্ষা ব্যক্তিকে স্ব-কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত করে দেয় যা যে কোন দেশের জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে।