একটি ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।

অথবা, একটি উত্তম প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, একটি উত্তম প্রতিবেদনের প্রকৃতি আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
একটি ভালো প্রতিবেদনে কতকগুলো মৌলিক এবং অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যাবলি ও গুণাবলি থাকা একান্ত প্রয়োজন । একটি ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্যের উপরই নির্ভর করে ঐ প্রতিবেদনের সঠিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা।
ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য : নিম্নে একটি ভালো প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. স্পষ্ট চিন্তা : চিন্তা এবং ভাষা উভয় দিক থেকেই প্রতিবেদনকে স্বচ্ছ এবং স্পষ্ট হতে হবে। Clauses এবং Sub-clauses ব্যতিরেকে বাক্যগুলোকে সহজ-সরল করা উচিত। দীর্ঘ Paragraph না করে একে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র Paragraph এ বিভক্ত করা উচিত, যাতে করে গুরুত্বপূর্ণ Point গুলো পর্যাপ্তভাবে high lighted হয় । চিন্তাধারা এবং ভাষা এতই সহজ হওয়া উচিত যাতে করে পাঠক অতি সহজেই প্রতিবেদন প্রণয়নকারী কি বলতে চান তা উপলব্ধি করতে পারেন। Technical শব্দ ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তা উল্লেখ করা, যাবে তবে তা স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করা উচিত।
২. প্রত্যয়ের ব্যবহার : গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রত্যয়সমূহের সুস্পষ্ট ও কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান করতে হবে এবং প্রতিবেদনে প্রদত্ত সংজ্ঞা ও ব্যবহারের মধ্যে সঙ্গতি বজায় রাখতে হবে। একজন ভালো প্রতিবেদন প্রণয়নকারীকে ব্যবহৃত প্রত্যয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে এবং Contradictions এবং Confusions যুক্ত প্রত্যয়সমূহকে পরিহার করতে হবে।
৩. পদের সতর্ক ব্যবহার : প্রত্যেক Research report এ কিছু পরিভাষা (Terminology) আছে এবং Researcher দ্বারা এই advertently এবং inadvertently termগুলো গবেষণায় ব্যবহৃত হয় । গবেষণায় ব্যবহৃত এই Terminologyকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত। তাছাড়া এমন কিছু পদ রয়েছে, যা সাধারণভাবে এক অর্থ প্রকাশ করে কিন্তু Academic উদ্দেশ্যে যখন ব্যবহার করা হয় তখন তা ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট সংজ্ঞা থাকা একান্ত প্রয়োজন ।
৪. সুনির্দিষ্ট সমস্যা : একজন ভালো প্রতিবেদন প্রণয়নকারীকে প্রথমেই সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট সমস্যা নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করতে হবে এবং সমস্যা চিহ্নিত করে এর সমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে হবে ।
৫. সাবলীল ভাষা : প্রতিবেদনের ভাষা হবে সহজ এবং সঠিক, যাতে করে গবেষণার বিষয়বস্তুর যথার্থ অর্থ প্রকাশ পাঠক তা সহজে বুঝতে পারেন। প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সরল বাক্যের সাহায্যে উপস্থাপন করা উচিত। অতীতকালের চেয়ে বর্তমান কাল ব্যবহার করা উচিত কিন্তু কোনো report যদি অতীতের ঘটনার নির্দেশ দেয় তবে তা অবশ্যই অতীতের আঙ্গিকেই বিধৃত করতে হবে। প্রতিবেদনে তৃতীয় পুরুষ ব্যবহার করা উচিত এবং সরাসরি ও ইতিবাচক বাক্য ব্যবহার করা উচিত । প্রতিবেদনে দুর্বোধ্য ভাষা এবং অপ্রয়োজনীয় বাক্য ব্যবহার করা উচিত নয় ।
৬. অধ্যায়ভিত্তিক রিপোর্ট : প্রতিবেদনটি সঠিকভাবে অধ্যায় (Chapter) অনুযায়ী বিন্যাস করা উচিত । একটি উত্তম প্রতিবেদনে অবশ্যই Chapters, sections, sub-sections, sub-headings থাকা উচিত এবং এগুলো অত্যন্ত সহজ- সরল ভাষায় উপস্থাপিত হতে হবে।
৭. প্রয়োজনীয় উপাত্তের সন্নিবেশ : গবেষকের কাছে সবসময়ই প্রয়োজনীয় এবং অপ্রয়োজনীয় উভয় প্রকার Data থাকে। কিন্তু সকল Data প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত করলে প্রতিবেদনটি শুধু বিরক্তিকরই হবে না, বরং তা প্রতিবেদনকে বিশালাকার করে তুলবে। গবেষণা প্রতিবেদনে যাতে করে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং কোনো কারণে তা বাদ না পড়ে যায়, সে ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রণয়নকারীকে নিশ্চিত হতে হবে ।
৮. উদ্ধৃতি ও পাদটীকার ব্যবহার : প্রতিবেদনে অনেক সময় উদ্ধৃতি এবং পাদটীকা ব্যবহার করা হয় । কোন স্বীকৃত বিশেষজ্ঞের অভিমত উল্লেখ করে কোন বিষয়বস্তুর পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন অথবা কোনো বিষয়ে যেসব গবেষক একইরকম বা ভিন্নমত পোষণ করেন তাদের অভিমত উপস্থাপন করে কোনো আলোচনার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়। উদ্ধৃতির উৎস চিহ্নিত করার জন্য সাধারণত পাদটীকা ব্যবহার করা হয় ।
৯. প্রতিবেদনের আকার : প্রতিবেদনের আকার বহু বড় হতে হবে কিংবা খুব ছোট হবে এমন কোন নিয়ম নেই তথ্য উপস্থাপন, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদনটি আলোচনার জন্য যতটুকু বিস্তৃত করা দরকার, ততটুকুই বিস্তৃত করতে হবে। অযথা প্রতিবেদনের আকার বড় করার জন্য কোন বিষয়ের পুনরাবৃত্তি কিংবা অপ্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশিত করার দরকার নেই ।
১০. প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা : একটি ভালো গবেষণা প্রতিবেদন অবশ্যই মানুষের দৃঢ়তাকে অনুপ্রাণিত করবে। এ কাজটি করা হয় যাতে করে পাঠক পরিপূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অনুধাবন করে যে এই প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য । সংগৃহীত উপাত্তের উৎস উল্লেখ থাকলেও পাঠক একে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করেন ।
১১. উপস্থাপন পদ্ধতি : প্রতিবেদনটি এমনভাবে লিখতে হবে যাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে সঙ্গতি থাকে । তাই পুরো প্রতিবেদনের আগাগোড়ায় যেন ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়। একজন প্রতিবেদক অবশ্যই Scientific terminology ব্যবহার করবেন কিন্তু প্রত্যেকটি পদ এমন সহজভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে, যাতে করে সাধারণ লোকও তা বুঝতে পারে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, গবেষণা প্রতিবেদন হলো গবেষকের স্বাধীনভাবে পরিচালিত অনুসন্ধানের ফল, যা সুপারিশসহ বা সুপারিশ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা পাঠকের নিকট উপস্থাপন করা হয়। যদিও গবেষণার ধরনের উপর নির্ভর করে গবেষণা প্রতিবেদন ভিন্ন আঙ্গিকতা লাভ করে, তথাপি একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যাবলি থাকা অপরিহার্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সুসমন্বয়েই একটি উত্তম প্রতিবেদন হিসেবে পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে ।